বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদান
ভোলার খবর ডেস্ক: প্রখ্যাত দরবেশ হযরত বয়েজিদ বুস্তামী (র:) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সুদূর ইরাক থেকে বঙ্গদেশে চট্টগ্রামে এসেছিলেন ১৪৬৩ খ্রীষ্টব্দে। তার অন্যতম সহযাত্রীদের মধ্যে দরবেশ শেখ আউয়াল ছিলেন অন্যতম। ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে তিনি এ দেশে স্থায়ীভাবে রয়ে গেলেন এবং বর্তমান নায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এলাকায় বরসবাস শুরু করেন। অনেক বছর পর তাঁরই তৃতীয় অধঃস্তন বংশধর শেখ বুরহানউদ্দিন ব্যাবসার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জ যান এবং সেখানকার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। শেখ বুরহানউদ্দিনের চতুর্থ অধঃস্তন বংশধর শেখ লুৎফর রহমানের ঘরে জন্ম নেয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
পরিবারিক সুত্র থেকেই তাঁর ধর্মীয় অবস্থান ছিলো অত্যন্ত সুদৃঢ়। তিনি যেমন একজন খাঁটি বাঙ্গালি, তেমনি ছিলেন একজন খাঁটি ঈমানদার মুসলমান। তিনি নিজের ধর্মের প্রতি যেমন দৃঢ় অবস্থান ছিলেন, তেমনি অন্যের ধর্মের শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বলেছিলেন বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালি ধর্ম-কর্ম করার স্ব-স্ব অধিকার অব্যাহত থাকবে। মুলমানরা তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রের নেই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করবে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না। তিনি বলেছিলেন, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরোপেক্ষতার উৎস ছিলো মদীনা সনদের সেই শিক্ষা, যেখানে উল্লেখযোগ্য শর্ত ছিলো, মদীনায় ইহুদী-নাসারা, পৌত্তলিক এবং মুসলমান সকলেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বল্পকালীন শাসনকালে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণের জন্য নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ভৌত অবকাঠামোগত পদক্ষেপ যেমন ছিলো, তেমনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধের কথা মনে রেখে তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসারে বাস্তব ভিত্তিক ও কার্যকরী নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ এক অধ্যাদেশ বরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধ ও নীতিমালা জনপ্রিয় করে তোলা, ইসলামে প্রসারে ইসলামিক বই-পুস্তক, সাময়িকী, পুস্তিকা অনুবাদ সংকলন করা ও প্রকাশ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামীক ফাউন্ডেশন আখেন সরকারী অর্থে পরিচালিত মুসলিম বিশে^র অন্যতম একটি বৃহৎ সংস্থা হিসেবে নন্দিত। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ যাবত পবিত্র কুরআনের বাংলা তরজমা, তাফসীর যেমন- তাফসীর ইবনে কাসির, তাফসীরে মারুফুল কোরআন ছিয়া ছেত্তাহ হাদীস শরীফ, সাহাবীদের জীবনী ইত্যাদি বিষয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এসব গ্রন্থ শুধু বাংলাদেশের পাঠকের কাছেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে ৬৪টি জেলা কার্যালয়, অর্ত-মানবতার সেবায় ২৮টি ইসলামীক মিশন, ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীর মাধ্যমে নানামূখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। যা ইসলাম প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য কীর্তির নজির প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনিই প্রথম জাতীয় পর্যায়ে বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা) মাহফিল উদযাপন কর্মসূচী গ্রহণ করেন, সরকার প্রধান হিসেবে বায়তুল মোকারম চত্বরে মাহফিলে শুভ উদ্বোধন করেন। একজন সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে ঈদে মলিাদুন্নবী (সা) মাহফিলের উদ্বোধন উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম দৃষ্টান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়ে এ মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে। তাছাড়া তিনিই প্রথম ঈদে মিলাদুন্নবী, শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষে সরকারী ছুটি ঘোষণা করেছিলেন যা আজো চলমান রয়েছে।
তিনি মদ, জুয়া, হাউজিং ও অসামাজিক কার্যকালাপ নিশিদ্ধকরণ এবং শাস্তির বিধান জারী করেছিলেন।
ঢাকাস্থ রেসকোর্স ময়দানটি ব্রিটিশ সৈন্যদের মিলিটারি ক্লাব হিসেবে কাজ করত। এখানে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড এবং প্রতি রবিবারে ঘোড়দৌড়ের জন্য ব্যবহৃত হত। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা বন্ধ করেন এবং রেসকোর্স ময়দানের নাম পরিবর্তন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাখেন।
বঙ্গবন্ধুর ইসলাম প্রচার ও প্রসারের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম জমায়ত তাবলীগ জমাতের বিশ্ব এজতেমার টঙ্গিতে সুবিশাল জায়গা বরাদ্দ, কাকরাইলের মাকরাজ মসজিদ সম্প্রসারণে জমি বরাদ্দ। রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামাত প্রেরণ রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল কমিউনিষ্ট দেশ। সে দেশে বিদেশ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য কেউ অনুমতি পেত না। বঙ্গবন্ধুর সাথে রাশিয়ার সথের সুসম্পর্কের ভিত্তিতে তিনিই প্রথম রাশিয়াতে তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরব বিশ্বের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জোড়ালো ভুমিকা পালন করেন। এছাড়া তিনি ফিলিস্তিন জনগোষ্ঠীর জন্য ১ লক্ষ পাউন্ড চা, ২৮ সদস্যের মেডিকেল টিম প্রেরণ করেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করে ইসলাম ও বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দের সামনের বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান মুসলিম বিশ্বে স্পষ্ট করেন। বঙ্গবন্ধুর এসকল অবদানের মাধ্যমে ইসলাম প্রসার ও প্রচারে তার অবদান অনস্বীকার্য।