আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ বুধবার, ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা মে, ২০২৪ ইং, ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী

রাজাপুরে অপবাদ দিয়ে মারধর, বসতঘরে অগ্নিকান্ড ক্ষোভে বিষপানে আত্মহত্যা, বিচারের দাবীতে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

মশিউর রহমান রাসেল (ঝালকাঠি প্রতিনিধি): আমার ছেলে নাইমকে বুধবার রাতে ফারুক হাওলাদারের মেয়ে মোবাইলে এসএমএস দিয়ে ডেকে নেয়। সেখানে গেলে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে ফারুক ও তার ছেলে নাইম’কে রাস্তায় ফেলে বেধরক মারধর করে এবং আমার ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে লোকজন নাইম’কে নিয়ে নানা রকম কথা বলে। সেই অপমান সইতে না আমার ছেলে শুক্রবার রাতে বিষ পান করে। বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুপুরে মারা যায় নাইম। এ ঘটনার আমি বিচার চাই। কান্না জড়িত কন্ঠে মুর্ছা যেতে যেতে এমনটাই জানান নিহত নাইমের পিতা মো. ছিদ্দিক মৃধা। রোববার বিকেলে নাইমের লাশ বাড়িতে আসলে জানাযা নামাজ শেষে স্বজনরা ও এলাকাবাসী নাইমের লাশ নিয়ে হত্যার বিচার দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ জানান। প্রেমিক ফারজানা তার বাবা ফারুক ও তার ভাই ফয়সালকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। ঝালকাঠির রাজাপুরে আট বছর প্রেম করে বিয়ে করতে না পারায় ও প্রেমিকার বাবা ভাইর বেধরক মারধরের ১দিন পর বিচার না পেয়ে মানুষের নানা রকম অপমান সইতে না পেরে বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে মো. নাইম (২৩) নামে এক যুবক। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বিকেলে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে স্বজনরা। সিঙ্গাপুর প্রবাসী নাইম উপজেলার বারবাকপুর এলাকার ছিদ্দিক মৃধার ছেলে। তিনি শুক্রবার রাতে বিষপান করলে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা বেগতিক হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাইমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুপুরে মৃত্যু হয় নাইমের। নাইমের মৃত্যু খবর শোনার পর থেকে ফারজানাসহ তার পরিবার সবাই আত্মগোপনে রয়েছে। এদিকে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে বিষপানের আগে নাইম তার ব্যবহৃত রোহান মৃধা নামে ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আমি একটা জবানবন্দি দিছিলাম সাংবাদিকদের কাছে। ওইটা যখন দিয়েছিলাম তখন আমি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলাম। ওই ভিডিও রেকর্ড সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমার মৃত্যুতে যদি কোনো কেস হয় তাহলে আমি চাই কেসটা আমার নামে হোক।’ কিছুক্ষণ পর আরেকটি পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘সম্ভব হইলে সবাই আমাকে মাফ কইরা দিয়েন। আমিও বাঁচতে চাইছিলাম, কিন্তু আমি অনেক ক্লান্ত, আর সম্ভব না বাঁচা।’ রোহান মৃধা নামের ফেসবুক আইডিটি নাইমের বলে নিশ্চিত করেছেন নাইমের চাচাতো ভাই ইসমাইল মৃধা। তবে নাইমের দুলাভাই ইকবাল হোসেন বলেন, নাইমকে যখন রাজাপুর হাসপাতালে ওয়াশ করাই তখন ওই আইডি থেকে পোস্ট করা হয়েছে। তখন নাইম অসুস্থ সে কিভাবে ফেসবুকে পোস্ট করে? ওই পোস্ট নাইম করে নাই তার প্রেমিক ফারজানা করেছে। নাইমের ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড ফারজানার কাছে ছিলো। ফারজানার সাথে নাইমের ২০১৫ সাল থেকে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। এরপর সবাই জানাজানি হলে ফারজানাকে তার পরিবার ২০১৭ সালে বিয়ে দেয়। ওর বিয়ের পর নাইমকে প্রবাসে (সিঙ্গাপুর) পাঠাই। সেখানে যাওয়ার পরেও ফারজানা নাইমের সাথে যোগাযোগ করে এবং বিভিন্ন সময় ওর কাছ থেকে টাকা পয়সা নেয় ফারজানা। নাইম দেশে আসার সময় ফারজানার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসে। বাড়িতে এসে ওরে সেইগুলো এবং ওর পছন্দ মতো আরো বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে দেয়। যা নাইমের মৃত্যুর পরদিন ফারজানার ঘর থেকে সব কিছু বস্তা ভরে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতে নাতে এলাকাবাসী দুইজন মহিলাকে আটক করে।
এ বিষয়ে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত প্রেমিকার ভাই মো. ফয়সাল বলেন, নাইম রাতে ফারজানার রুমের জানালার কাছে আসছে এরপর ওরে কয়টা চড়থাপ্পড় দিছি, এছাড়া বেশি কিছু করি নাই। উল্টো আমাদের ফাঁসানোর জন্য ইকবাল ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিবে বলে হুমকি দিছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফারুক হাওলাদার জানান, বুধবার রাতে নাইম আমাদের ঘরের জানালার পাশে আসে। টের পেয়ে আমার ছেলে ফয়সাল ঘরের বাইরে এসে নাইম’কে এখানে আসার কারণ জানতে চেয়ে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তার শরীরে আঘাত করে। আমরা বাহিরে ডাক-চিৎকার শুনতে পেয়ে বাইরে এসে আমার ছেলেকে থামিয়ে দিই। নাইমের কাছে আমার মেয়েকে ডিস্টার্ব করার কারণ জানতে চাই। পরে নাইমের দুলাভাই ইকবাল’কে খবর দিলে সে এসেই কোনো কথা না শুনে আমাকে মারধর শুরু করে। এ ঘটনায় আমি বৃহস্পতিবার রাজাপুর থানায় অভিযোগ দেই। রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মু.আতাউর রহমান জানান, এঘটনায় কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখবো এবং আইনগত পদক্ষেপ নিব।

ফেসবুকে লাইক দিন