শিশুদের প্রতিক শেখ রাসেল!!
রাসেল মেদের স্বপ্ন চোখে কি যে মায়া
রাসেল মোদের মাত্ভূমির শ্যামল ছায়া
রাসেল মোদের সমর-জয়ের স্বাধীনতা
রাসেল মোদের নির্ভয়-সাহসী বীরের কথা।
অবুঝ হয়েও জীবন দিলেন
নিস্পাপ হয়ে রক্ত ঝরালেন।
থাকবে রাসেল বন্ধুর আসনে
থাকবে রাসেল স্মৃতির গহীনে।
“শেখ রাসেল দ্বিপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দূর্জয়।” বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক শেখ রাসেল দিবস পালনের প্রস্তাবে শেখ রাসেলের জন্মদিন ১৮ অক্টোবর ২০২১ সাল থেকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
যুগে যুগে অসংখ্য মহান ব্যক্তিদের আবির্ভাব হয়েছে বাঙলার বিভিন্ন ঘর থেকে। এর মধ্যে আমারা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখতে পেরেছি অনেকেই। অনেকেই আবার চলে গিয়েছেন সবার অন্তরালে বিস্মৃতির অতল গহ্বরে। বাঙালি জাতি হিসেবে আজকে আমরা যেখানে পৌঁছেছি, সেই সব ব্যক্তিরা তার পেছনে কম বেশি অবদান রেখেছেন। ১৮ ই অক্টোবরের ১৯৬৪ সালে শেখ রাসেল জন্ম, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ছোট ছেলে শেখ রাসেল। শেখ রাসেল নাম রাখার পেছনে রয়েছে ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু বরাবরই ছিলেন বিশ্ব শান্তি এবং সহাবস্থানের পক্ষে। তিনি দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল এর বিশেষ ভক্ত ছিলেন। বার্ট্রান্ড রাসেল, নোবেল বিজয়ী সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক ছিলেন। একই সাথে রাসেল ছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও সংঘর্ষ বিরোধী আন্দোলনের বড় মাপের একজন নেতা। এই অনুপ্রেরণা থেকেই বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রাখেন শেখ রাসেল। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে জেলে রাখে তখনকার পাকিস্তান সরকার। রাসেলের ছেলেবেলা দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতোই বর্ণময়। জন্মের পর খুব বেশি সময় তার সৌভাগ্য হয়নি বাবার সান্নিধ্য পাওয়ার। তার বাবা তার কাছে একেবারেই অপরিচিত একজন মানুষের মতো ছিলেন।
শিশু রাসেল , বড় বোনের সাথে কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গিয়েছিলেন । মাত্র দু বছর বয়সের রাসেল তখন তার বোনকে জিজ্ঞেস করে– “তোমার বাবা কে আমি কি বাবা বলে ডাকতে পারি? অর্থাৎ সে তার আপার বাবা, তার বাবা নয়! যখন সে বাবাকে ভালোভাবে চিনতে পারে তখন সে আবার বাবার কাছ থেকে আসতে একদমই চাইতো না । তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে। ১১ বছর বয়সে যখন তাকে হত্যা করা হয় তখন রাসেল সেই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট অভিশপ্ত রাত সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। সেই রাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা, দেশি বিদেশি বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলেন। একে একে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। সেই রাতের শেষ অংশে বঙ্গবন্ধু, এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করে হত্যাকারীরা।
শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মচারী মহিতুল ইসলাম পরে জানান, “রাসেল দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন, জানতে চান– সেনারা তাকেও মারবে কিনা।” ঠিক তখনই একজন সেনা কর্মকর্তা মহিতুলকে চড় মারে। রাসেল ভয় পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। সে কাঁদতে থাকে তার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। সেই সময় একজন ঘাতক শিশু রাসেলকে ভেতরের ঘরে নিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। শেখ রাসেল কেন শিশুদের প্রতিক, কীভাবেই বা তিনি শিশুদের বন্ধু হয়ে উঠলেন বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে রাসেলের ছেলেবেলার দিনগুলোতে। ছেলেবেলার দিনগুলো সম্পর্কে যেটুকু জানা যায় তার অধিকাংশই শিশু বয়সের নিষ্পাপ আত্মভোলা কর্মকাণ্ডে পূর্ণ ছিল।রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল। মাছ ধরে আবার সেই মাছ সে পুকুরেই ছেড়ে দিত অবুঝ রাসেল। এতেই সে ভিষণ আনন্দ পেত।
রাসেলের স্বভাব ছিল অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃতির। তার এই দুরন্তপনার সঙ্গী ছিল একটি বাইসাইকেল। রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে নিজের বাইসাইকেলে রোজ স্কুলে যেত রাসেল।
রাসেলের শৈশব আখ্যান যেন আমাদের সকলের শৈশবের গল্প মনে করিয়ে দেয়। তার শৈশবের গল্প কথাগুলির মধ্যে আমরা যেন বারবার নিজেদেরকে খুঁজে পাই। পড়াশোনা, খেলাধুলা, দুরন্তপনা এসব নিয়ে রাসেল আমাদের সকলের কাছেই হয়ে ওঠে শৈশবের এক আদর্শ। রাসেলের মধ্যে খুব ছোট বেলাতেই দেখা গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মতোই মানবিকতা। সব মানুষ সহ পশু পাখিদের জন্যও ছিলো তার অগাধ রকমের ভালোবাসা। সবার সাথে মিশতো, বাড়িতে কাজের লোক সহ সবাইকে খুব সম্মান শ্রদ্ধা করতো। বাঙালি জাতির কাছে এক যুগোত্তীর্ণ মানব শেখ রাসেল। যিনি অবুঝ থেকেও দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। বাঙালি জাতি তার মধ্যে খুঁজে পায় রূপকথার মতো নিজ নিজ ছেলেবেলাকে। শেখ রাসেলের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকে আপামর বাঙালির শিশু সময়। অন্যদিকে তার নির্মম মৃত্যুর কাহিনী বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের দেশের করুন ইতিহাসকে। সেই সমস্ত নৃশংস ক্ষমতালোভী মানুষের কথা যারা কেবলমাত্র ক্ষমতার লোভে ১১ বছরের একটি ছোট্ট শিশুকেও জীবন ভিক্ষা দেয়নি। চিরকাল শেখ রাসেল অমর হয়ে থাকবেন বাঙালি জাতির স্মৃতির হৃদয়ে। শিশুরা শেখ রাসেলের স্মৃতি বুকে নিয়ে তাকে বন্ধুর স্নেহের আসনে বসিয়ে সভ্যতার পথে আরো অগ্রসর হোক।