আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ সোমবার, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং, ৮ই জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
সর্বশেষঃ

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৫৩তম শাহাদত বার্ষিকী।

ভোলার খবর ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফার ৫৩তম শাহাদত বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন মোস্তফা। স্বাধীনতা যুদ্ধের মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিক বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর মধ্যে অন্যতম। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফার জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম হাজীপাড়া গ্রামে। তার বাবা হাবিবুর রহমান ছিলেন একজন হাবিলদার। মা মালেকা বেগম একজন রত্নগর্ভা ও বীরমাতা। হাবিলদার হাবিবুর রহমানের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে মোস্তফা ছিলেন সবার বড়।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে এবং স্কুল সনদ অনুযায়ী বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের নাম মোহাম্মদ মোস্তফা। বাসার সামনে দিয়ে সৈন্যদের সুশৃঙ্খল কুচকাওয়াজ দেখে কিশোর মোস্তফার মনেও সাধ জাগতো সেনাসদস্য হবার। পারিবারিক বাধার কারণে ১৯৬৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে যোগ দেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে নিয়োগ করা হয় ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কুমিল্লায়। ভালো বক্সার হিসাবেও রেজিমেন্টে মোস্তফার সুনাম ছিলো। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পূর্বে বক্সার হিসাবে সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা অবৈতনিক ল্যান্স নায়েক হিসেবে পদোন্নতি পান। এই বীর সেনানী পাকিস্তানি ঘৃণ্য চক্রান্ত বুঝতে পেরে কয়েকজন বাঙালি সৈনিককে সঙ্গে নিয়ে লে.কর্নেল খিজির হায়াত খানসহ সকল পাকিস্তানি অফিসার ও সেনাকে গ্রেফতার করেন। এরপর তারা মেজর খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে আশুগঞ্জ, উজানিস্বর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এন্ডারসন খালের পাশ দিয়ে প্রতিরক্ষায় অবস্থান নেন। ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে পাকিস্তানি বাহিনী তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু করে প্লাটুন পজিশনের উপরে। সারাদিন যুদ্ধ চলে। ১৮ এপ্রিল সকালে বর্ষণমুখর পরিস্থিতিতে শত্রু দরুইলা গ্রামের কাছে পৌঁছে যায়। মূল আক্রমণ আরম্ভ হয় দুপুর ১২টায় অবস্থানের পশ্চিমদিক থেকে। শত্রুর একটি দল প্রতিরক্ষার পিছন দিক দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে ঘিরে ফেলছিলো। মুক্তিবাহিনী দরুইলা গ্রাম থেকে আখাউড়া রেল স্টেশনের দিকে পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নিরাপদে সেখান থেকে সরে আসতে হলে তাদের প্রয়োজন ছিলো নিরবচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। মোহাম্মদ মোস্তফা সহযোদ্ধাদের জানান, তিনি নিজে এই কাভারিং ফায়ার প্রদান করবেন এবং সবাইকে পেছনে হটতে নির্দেশ দেন। সহযোদ্ধারা মোস্তফাকেও পশ্চাদপসরণের অনুরোধ করেন। কিন্তু কর্তব্যের টানে অনড় মোস্তফা ছিলেন অবিচল। তিনি সহযোদ্ধাদের বললেন তার প্রাণের তুলনায় সহযোদ্ধাদের অনেকের প্রাণের মূল্য অধিক। মোস্তফার ক্রমাগত নিখুঁত ফায়ারে পাকিস্তানিদের প্রায় ২০-২৫ জন হতাহত হয় এবং তাদের সম্মুখগতি মন্থর হয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে মোস্তফার অবস্থানের উপরে মেশিনগান এবং মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। একপর্যায়ে মোস্তফার এলএমজির গুলি শেষ হয় এবং তিনি মারাত্মকভাবে জখম হন। তখন পাকিস্তানি বাহিনীর সৈনিকরা তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীকালে তাকে শাহাদতের স্থানের পাশেই সমাহিত করা হয়। মোস্তফা তাঁর জীবন দিয়ে সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। অসীম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ প্রদান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে যে কয়জন বীর জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য লড়াই করেছেন, শহিদ হয়েছেন তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কাছে আমাদের ঋণ আজন্ম।
এই দিনে মোস্তফা কামালের ভাইয়ের ছেলে অধ্যক্ষ মোঃ সেলিম আহমেদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল নিজ জেলার, নিজ জন্মস্থানের মাটিতে সমাহিত হতে পারেননি। আমাদের পরিবারের তথা ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের চাওয়া বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা নিজ জন্মস্থানে সমাহিত হোক।

ফেসবুকে লাইক দিন