আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং, ১৭ই রমযান, ১৪৪৫ হিজরী
সর্বশেষঃ

সাদকাতুল ফিতরের বিধি বিধান ও তাৎপর্য!!

সাদকাতুল ফিতর : ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং এ আনন্দে যেন মুসলিম জাতির প্রতিটি সদস্য শরিক হতে পারে এ জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে সদকাতুল ফিতর। ফিতর শব্দের অর্থ রোযা খোলা, ভাঙ্গা ও পরিত্যগ করা। ইসলামী শরীয়তে সদকা ফিতর অর্থ আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দার উপর একটি সদকা নির্ধারণ করেছেন যা রমযান মাস শেষে রোযা শেষ হওয়ার খুশি ও শুকরিয়া হিসেবে আদায় করতে হয়।

আবু নু‘মান (র)… ইব্ন ‘উমর (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করীম (সঃ) প্রত্যেক পুরুষ, মহিলা, আযাদ ও গোলামের পক্ষ থেকে সাদকাতুল ফিতর অথবা সাদকা-ই-রমযান হিসেবে এক সা‘ খেজুর বা এক সা‘ যব আদায় করা ফরয করেছেন। তারপর লোকেরা অর্ধ সা১ গমকে এক সা খেজুরের সম মান দিতে লাগল। (রাবী নাফি‘ বলেন ইব্ন উমর (রা) খেজুর (সাদাকতুল ফিতর হিসেবে) দিতেন। এক সময় মদীনায় খেজুর দর্লভ হলে যব দিয়ে তা আদায় করতেন। ইব্ন উমর (রা) প্রাপ্ত বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সকলের পক্ষ থেকেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করতেন, এমনকি অঅমার সন্তানদের পক্ষ থেকেও পক্ষ থেকেও সাদকার দ্রব্য গ্রহীতাদের দিয়ে দিতেন এবং ঈদের এক দিন পূর্বেই আদায় করে দিতেন। (বোখারী শরীফ-১৪২৩)

আদম (র)… (আবদুল্লাহ) ইব্ন উমর (রা) থেকে বর্নিত যে , নবী করীম (সঃ) লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন। (বোখারী শরীফ-১৪২১)

মু‘আয ইব্ন ফাযালা (রা)… আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা নবী করীম (সঃ) এর যুগে ঈদের দিন এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য সাদকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতাম। আবু সা‘ঈদ (রা) বলেন আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর। (বোখারী মরীফ-১৪২২)

আবদুল্লাহ ইব্ন মুনীর (র)… আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (সঃ) এর যুগে এক সা‘ খাদ্যদ্রব্য বা এক সা‘ খেজুর বা এক সা‘ যব বা এক সা‘ কিসমিস দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। মু‘আবিয়া (রা)-র যুগে যখন গম আমদানী হল তখন তিনি বলেন, এক মুদ গম (পূর্বোগুলোর) দু‘মুদ-এর সমপরিমান বলে আমার মনে হয়। (বোখারী শরীফ-১৪২০)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, ঐ দিন ভিক্ষা চাওয়া থেকে ভিক্ষুকদের মুক্ত করে দাও। সদকা ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার পরে তাৎক্ষণিকভাবে বিলম্বে আদায়ে ক্ষেত্রে কোনটি উত্তম এ ব্যাপারে বাহরুর রায়েক কিতাবে সদকা ফিতির ওয়াজিব হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (২/২৫১)।

ঈদের দিনের পূর্বে সদকা ফিতির দেওয়াও বৈধ। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় সাহাবীগণ ঈদের দিনের আগেই সদকা ফিতর আদায় করে দিতেন। (মিনহাতুল খালেক আলা বাহররি রায়েক- ২/২৫১)।
ঈদের দিন নামাযে যাওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করে দেওয়া উত্তম। যদি নামাযের পরে অথবা ঈদের দিনের পূর্বেই আদায় করে দেয়, তাহলেও অসুবিধা নেই। বস্তুতঃ যাদের উপর ফিতরা ওয়াজিব, যতক্ষণ পর্যন্ত আদায় না করবে ওয়াজিব থেকে যাবে, মাফ হবে না। যদিও কোন কারণবশতঃ রোযা না রাখে। ঈদের দিনের পূর্বে সদকা ফিতির দেওয়াও বৈধ। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় সাহাবীগণ ঈদের দিনের আগেই সদকা ফিতির আদায় করে দিতেন।
সদাকাতুল ফিতর কার ওপর ওয়াজিব: সদাকাতুল ফিতর একটি আর্থিক ইবাদত। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য যেসব শর্ত আব্যশক সদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রেও অনুরূপ শর্ত প্রযোজ্য। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যাঁর ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সঙ্গে সঙ্গে সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই কেউ যদি সেদিন সুবহে সাদিকের আগে জন্ম হয় বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তার ওপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। যে ব্যক্তি সুব্হে সাদিকের পূর্বে ইন্তিকাল করে তার সম্পদ থেকে তার জন্য সাদকায়ে ফিতর দিতে হবে না এবং যদি ঈদের দিন সুব্হে সাদিকের পরে কেউ মুসলমান হয় অথবা কোন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে, তাহলে তার উপর সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়। অর্থাৎ কোনো দরিদ্র ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পূর্বে ধনী হলে তার উপর সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। ধনী ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পূর্বে দরিদ্র হলে তার উপর সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না। অর্থ্যাৎ একজন স্বাধীন মুসলমানের উপর সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য ‘সুবহে সাদিক’ শর্ত। ‘সুবহে সাদিক’ আগমনের পর ব্যক্তির অবস্থা অনুযায়ী সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত এমন অভাবী লোকদের সদকাতুল ফিতর দিতে হবে। একজন দরিদ্র মানুষকে একাধিক ফিতর দেওয়া যেমন জায়েজ, তেমনি একটি ফিতরা বণ্টন করে একাধিক মানুষকে দেয়াও জায়েজ। যে ব্যক্তি যে শহরে অবস্থান করেন, তিনি সে শহরের বাজার দর অনুযায়ী সাদাকাতুল-ফিতর আদায় করবেন। সে অনুযায়ী আমাদের দেশের প্রচলিত বাজারদর অনুযায়ী ১৪৪৪ হিজরী এবং ২০২৩ সালে সাদকাতুল ফিতর- এর হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে (সুত্র: বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২ এপ্রিল-২০২৩ জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভা)
আধুনিক পরিমাপে সা‘/অর্ধ সা‘ এবং এর বাজার মূল্য-
১। গম- অর্ধ সা‘- ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম= [১১৫ টাকা]
২। যব- ১ সা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম=[৩৯৬ টাকা]
৩। খেজুর- ১ সা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম= [১৯৮০ টাকা]
৪। কিসমিস-১ সা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম=[১৬৫০ টাকা]
৫। পনির- ১ সা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম=[২৬৪০ টকি]
সাদকাতুল ফিতর আদায়ের ফজিলত:
সাদক্বাতুল ফিতরের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষ্য পাওয়া যায়। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। রোজাদারের ভুল-ক্রুটি মার্জনার জন্য এবং দরিদ্র মিসকীনদের খাদ্যাভাব দূরীকরণের জন্য (মিশকাত শরীফ)।
অন্যত্রে পাওয়া যায়, হযরত ওয়াকী ইবনুল জাররাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রমজানের জন্য সাদক্বাতুল ফিতর নামাজে সাহু সিজদার ন্যায়। নামাজের ত্রু টি যেমন সাহু সিজদা দূরীভূত করে তদ্রুপ রোজাদারের রোজা পালনে ভুল-ত্রু টি, গাফিলতি ইত্যাদি দুর করে সাদক্বাতুল ফিতর (গুনিয়াতুত তালেবীন)।
রোজাদারের জন্য সাদক্বাতুল ফিতর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রোজাদারের রোজাকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সকল প্রকার ভুল-ত্রু টি থেকে হেফাজত করতেই স্রষ্টার পক্ষ থেকে এই অনন্য আয়োজন। রোজাদারের রোজার হেফাজত হচ্ছে। পাশাপাশি অসহায় মিসকীনদের খাদ্যাভাব দুর হচ্ছে। হাসি ফুটছে সকলের মুখে। ইসলাম কত সুন্দর! কত সুশৃঙ্খলতায় আবদ্ধ প্রতিটি হুকুম। একেকটি হুকুমের পিছনে স্রষ্টার নানান উদ্দেশ্য। সকল কিছুই আমাদের জন্য। রোজাদের জন্য। মুসলমানের জন্য। সর্বোপরি মানুষের জন্য। বলা যায়, ‘ভাতৃত্ববোধ’ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ‘সাদক্বাতুল ফিতর’

ফেসবুকে লাইক দিন