আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ মঙ্গলবার, ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং, ১৮ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরী
সর্বশেষঃ

হায়াতের অবসান- তাকী আহমাদ

ভোলার খবর ডেস্ক: নশ্বর পৃথিবীর ছোটো ছোটো শব্দগুলোর মধ্যে ছোট্ট একটি শব্দ ‘মৃত্যু’। কিন্তু এর ভেতর লুকিয়ে আছে একটি মূল্যবান হায়াতের অবসান। যে হায়াতের মধ্যে ছিল সহস্র দুঃখ, হতাশা, আনন্দ, সুখ, ভালো থাকার প্রচেষ্টা, যশ-খ্যাতির প্রতিযোগিতা। এ সবকিছুর হিসাব-নিকাশ না মিলিয়েও একদিন ‘আমি’ ব্যক্তিটার সমাপ্তি ঘটলো। নিঃশ্বেষ হয়ে গেল ধরণি থেকে আমি ব্যাক্তিটার পরিচয়।
অথচ এই আমি ছোট্ট একটা নিষ্পাপ শিশু হয়ে যেদিন পৃথিবীতে এসেছিলাম, সেদিন এই পৃথিবীর সাথে আমার কোনো দেনা-পাওনার হিসাব ছিল না। কী পেলাম আর কী হারালাম- তা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না তখন।
সময়ের পালাবদলে যখন একটু বড়ো হয়েছিলাম। লোভের সাথে পরিচয় হযেছিল আমার। লোভকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে রপ্ত করেছিলাম মিথ্যে বলার আজিব কৌশল। এরপর শনৈ শনৈ আরও একটু বড়ো হলাম। হঠাৎ বুঝতে পেরেছিলাম যৌবনের উপস্থিতি। যৌবনের ক্ষুধা কমাতে গিয়ে চরিত্রহীনতার বৈশিষ্ট্যগুলোও নিজের ভেতর চলে এসেছিল ধীরে ধীরে। এরপর আরও একটু বড়ো হলাম। বুঝলাম, এই দুনিয়ায় কিছু কাগজের মূল্য মানুষের চেয়েও বেশি। সেই কাগজ কুড়াতে ছুটেছিলাম শত শত অসৎ ও অবৈধ নোংরা গলিতে; এ পথ থেকে সে পথে, প্রান্তর থেকে প্রান্তরে। এভাবেই চলছিল আমার জীবন। হঠাৎ একদিন অনুভব করলাম, কী যেন একটা নেই আমার জীবনে। কিন্তু কী সেই জিনিসটা, আসলে কী, সেটা বুঝতে বুঝতেই আমার জীবন প্রহর শেষ হয়ে গেল। চারপাশে বিপুল অক্সিজেন থাকা সত্ত্বেও নিশ্বাস নিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। অনেক চেষ্টা করেছিলাম একটু বুক ভরে শ্বাস নিতে; কিন্তু কোনোভাবেই পারছিলাম না । পৃথিবীর বুক থেকে শেষবারের মতো খানিকটা বাতাস খুব কষ্ট করে নাক দিয়ে টেনে নিয়ে চিরতরে সেটুকু ছেড়ে দিয়েছিলাম। বায়ুথলিটা পুরো খালি হয়ে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। নিশ্বাসটুকু ছাড়তে ছাড়তে ভাবলাম, পৃথিবী কতটা নিষ্ঠুর! পৃথিবী ভরা কত অক্সিজেন, শেষ বেলায় পৃথিবী আমাকে একটুও সাথে নিতে দিলো না।
অথচ কতটা মায়া দিয়ে এই পৃথিবীটাকে বেঁধে রেখেছিলাম এতোদিন। অর্থভান্ডার, স্থায়ী দালান-কোঠা জোগানোতে ব্যস্ত ছিলাম সবসময়। যা যা উপার্জন আর অর্জন করেছিলাম, তার কোনটাই আমার এই পরিস্থিতিটাকে থামানোর ক্ষেত্রে আর কাজে আসছে না। বুঝলাম, বৃথা ছুটেছিলাম এসবের পিছনে। কত শ্রম, অর্থ, মেধা আর ক্ষমতা ব্যয় করে যেসব পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছিলাম, সেসবের কোন কিছুই আজ আর আমার এই মৃত্যুযাত্রাকে থামাতে পারল না । এমনকি এসব অর্জন আমার ফুসফুসে একবিন্দু অক্সিজেনও ঢুকিয়ে দিতে পারলো না। আমার এটা আমার সেটা করে করে যা অর্জন করলাম, আজকে দেখলাম যে কোনো কিছুই আমার না। যাদের জন্য এতদিন এত কিছু করলাম আজকে তারাই কেমন নিষ্ঠুর হয়ে গেল। ঘর থেকে আমার দেহটা বের করার সময় এক টুকরো সাদা কাপড় ছাড়া আর কিছুই দিলো না ওরা। যেই শরীরটা দামি বিছানা ছাড়া শুতে যেত না, সেই শরীরটাকে খোলা আকাশের নিচে খাটিয়ায় রেখে দিল ওরা। পচে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়, তাই সোজা বনের দিকের নির্জন -নিরালয়ে রেখে আসলো আমার নিথর দেহটাকে। ফিরে আসলো আপনজন, বন্ধুস্বজন। বুঝলাম, এই পৃথিবীর মায়া, ভালোবাসা সবই বৃথা। যেভাবে এতদিন ভেবেছিলাম, সব-ই ভুল। যা যা এতদিন বিশ্বাস করেছিলাম, স-ব ফাঁকি। যেভাবে জগৎটাকে এতদিন দেখলাম, স-ব ধোঁকা। যত কথা শুনেছিলাম, স-ব মিথ্যা। হায় আফসোস!
হায়াতের অবসানে বর্তমান আমার বাস্তবতা।

ফেসবুকে লাইক দিন