আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ সোমবার, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মে, ২০২৪ ইং, ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
সর্বশেষঃ

আজ আখেরী চাহার সোম্বা

ভোলার খবর ডেস্ক: আখেরী চাহার সোম্বা। আজকের এই দিনটি মুসলিম বিশ্বের নিকট বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ “আখেরী চাহার সোম্বা” মূলত আরবি ও ফার্সি শব্দ যুগল। আরবি শব্দ ‘আখেরী’ অর্থ শেষ। ফার্সি শব্দ যথাক্রমে ‘চাহার সোম্বা’ অর্থ হল, ‘সফর মাস’ ও ‘বুধবার’। অর্থাৎ, আখেরী চাহার সোম্বা অর্থ দাড়ায়– সফর মাসের শেষ বুধবার। এই দিনটিকে মুসলিম উম্মাহ খুশির দিন হিসাবে জানে এবং খুশির দিন হিসাবেই উদযাপন করে থাকে। কিন্তু কেন?
এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক-এর লেখা “সিরাতে রাসুলুল্লাহ (রা:)” গ্রন্থ হতে জানা যায়, সফর মাসের শেষ দিকে কিংবা রবিউল আউয়াল মাসের শুরুর দিকে হযরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার অন্তিম যাত্রার অসুখ হয়। ওই মাসের এক মধ্য রাতে তিনি গিয়েছিলেন বাকিউল গারকাদ ( জান্নাতুল বাকি) কবর স্থানে। সেখানে মৃত ব্যক্তিদের জন্য তিনি মোনাজাত করেন। শেষ রাতে ঘরে ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওই অসুখ যে তার মৃত্যু যাত্রার সূচনা ছিল, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।
হযরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার মুক্ত ক্রীতদাস হিবার কথপোকথন থেকেও বিষয়টি সুস্পষ্ট। মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মধ্যরাতে বাকিউল গারকাদ কবর স্থানে যান,তখন হিবাও সেখানে গিয়েছিলেন। হিবা বলেন, মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে বলেন,” আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে দুটি বিকল্পের একটি পছন্দ করতে বলা হয়েছে।”
এক, এই জগতের সব সম্পদের ধনভাণ্ডারের চাবি ও দীর্ঘ জীবন।
দুই, বেহেশত, আমার আল্লাহর দিদার এবং তাৎক্ষণিক বেহেশত।
হিবা বলেন, ‘ আমি বললাম আপনি প্রথমটি পছন্দ করেন।’
তিনি বললেন,’আমি দ্বিতীয়টি পছন্দ করেছি।’
অর্থাৎ নবীজী দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে আল্লাহর দিদার লাভকে বেছে নিয়েছেন। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে ওই অসুখে তার জীবনাবসান হবে, তা তার অজানা ছিলনা।
এ অসুস্থতায় আবিসিনিয়া থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হলেও তার অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। তিনি কিছুক্ষণ ভালো থাকলেও পরবর্তী মুহূর্তেই জ্ঞান হারাতেন। এ অবস্থায় নবী পরিবারের সদস্য ও তার সাহাবীরা তার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দেন।
ওই নিরাশার মধ্যেই একদিন নবীজী আশার আলো জ্বালালেন। এক সকালে তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন। অনেকটা সুস্থ স্বাভাবিক আচরন শুরু করেন। সাত কুয়ার পানি দিয়ে তিনি গোসল করেন। হযরত ফাতেমা এবং দুই নাতি হাসান ও হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরের খাবার খান।
প্রিয় নবীর সুস্থ হওয়ার ঘটনায় তার পরিবারের সদস্য ও সাহাবীরা আনন্দে আত্মাহারা হন। খুশিতে তারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে নফল নামাজ আদায় করেন। আল্লাহর নামে গরীব-দুঃখীদের মধ্যে সামর্থ্য অনুযায়ী দান-খয়রাত করেন।
বর্নিত আছে যে, এই খুশিতে সাহাবীদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) পাঁচহাজার, হযরত ওমর (রা:) সাতহাজার, হযরত আলী(রা:) তিনহাজার দিরহাম এবং হযরত আব্দুর রহমান আউফ একশো উট দান করেন।
হযরত আয়েশা(রা:) এর বর্ননা থেকেও জানা যায় যে, সফর মাসের শেষ বুধবার মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হঠাৎ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সফর মাসের শেষ বুধবার বিশ্ব নবী সুস্থ হয়ে ওঠেছেন বিধায় পারসিক মুসলিমরা এর নামকরণ করেন, ” আখেরী চাহার সোম্বা। “

ফেসবুকে লাইক দিন