আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
সর্বশেষঃ

শিশুরা হারিয়ে ফেলছে সাঁতার চর্চা,

ভোলার শিশুরাও ভূলে যাচ্ছে সাঁতার কি?? হচ্ছে না সাঁতার চর্চা। পুকুর বা প্রশিক্ষনের অভাবে চাইলেও শিখানো যাচ্ছে না সাঁতার।

আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। তবুও সংবাদ শিরোনাম হয় পুকুরে ডুবে মৃত্যু কিংবা নদীতে ডুবে মৃত্যু’। অথচ সাঁতার আমাদের পূর্বপুরুষের অস্থিমজ্জার সাথে মিশে আছে। আমাদের গর্ব ব্রজেন দাশের মত বিখ্যাত সাঁতারুর জন্ম হয়েছিল এ দেশে। তিনি ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ব্যক্তি যিনি ইংরেজদের দম্ভ চূর্ণ করতে ২৩টি দেশের প্রতিযোগীকে পরাজিত করে পার হয়েছিলেন ইংলিশ চ্যানেল। তিনি সর্বমোট ৬ বার ইংলিশ চ্যানেল বিজয় করেন।

আরো বলতে পারি চট্টগ্রামের কিংবদন্তী সাঁতারু বজল আহমদের কথা। যিনি ১৯৬১ সালে চট্টগ্রামের পক্ষে ১৩ বছর বয়সে ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সাঁতারে সিনিয়র বিভাগে সর্বকনিষ্ট সাঁতারু হিসেবে বড় বড় প্রতিযোগীদের হারিয়ে ৩য় স্থান দখল করে স্বর্ণপদক লাভে বিস্ময় সৃষ্টি করেন। যার কিংবদন্তী সর্বজনবিদিত।

বিখ্যাত সাঁতারু মুন্সিগঞ্জের কৃতী সন্তান মোশারফ হোসেন ও রাজশাহীর রওশন আলী এবং নারায়ণগঞ্জের সন্দার ইদ্রিসের নাম এখনো মুখে মুখে। অথচ তাদেরই উত্তরসূরী আমাদের সন্তানদের শহরকেন্দ্রিক জীবন প্রবাহ অলস, অকর্মণ্য ও পরনির্ভরশীল করে দিচ্ছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার ব্রিগেড, মেরিন, বিপিএডসহ যে কোন প্রতিরক্ষা বিভাগে পরীক্ষা দিতে সাঁতার জানতে হয়। শরীর চর্চার অন্যতম মাধ্যম হল দৌড়ঝাঁপ ও সাঁতার।

গত কয়েকদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘৫ শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ চকরিয়া’ শিরোনামে এক হৃদয়বিদারক সংবাদ চোখে পড়লো (সূত্র- ১৬ জুলাই, ২০১৮, দৈনিক আজাদী) বা গোসল করতে গিয়ে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু। চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানাধীন এনায়েত বাজার গোয়াল পাড়ার পুকুরে কৃষ্ণ ঘোষ (০৭) নামের শিশুটি অপর ১০টা ছেলের সাথে গোসল করতে যায়।

কিন্তু অন্যরা ফিরে আসলেও সে ফিরে আসেনি। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা এবং স্থানীয় লোকজন তাকে পুকুরের ঘাটের নিচে মৃত অবস্থায় খুঁজে পায়। কিংবা পূর্ব সৈয়দাবাদ প্রবাসী খোরশেদ আলমের ছেলে ফরহাদুল আলম তাছিন (৮), মেয়ে মরিয়ম জান্নাত তুষ্পি (৫) তাদের পুকুরে পড়ে মারা যায়।

একই দিনে উপজেলার চরগাচরের রফিক আহমদের এক বছরের শিশু বাথরুমের বালতিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। (সূত্র- ২৫ আগস্ট, ২০১৭, দৈনিক পূর্বকোণ) এই রকম অসংখ্য হৃদয়বিদারক সংবাদ নিয়মিত পত্রপত্রিকায় চোখে পড়ে। প্রতিবছর দেশে পানিতে ডুবে মারা যায় প্রায় ১৭ হাজার শিশু থেকে ১৯ হাজার। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু নিয়ে দেশে খুব একটা আলোচনা-সমালোচনা নেই। সাঁতার ক্লাব-এর ২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১০ বছরব্যাপী গবেষণায় পরিচালিত তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় প্রতিবছর গড়ে ১৯ হাজার শিশু মারা যায়, ১-৩ বছর বয়সের শিশু বালতিতে পড়ে, ২-৭ বয়সের শিশু পারিবারিক তত্ত্বাবধানের অভাবে পানিতে ডুবে মারা যায়, ৭ এর উপরে বয়সের যারা সাঁতার না জানার কারণে। কোন সময়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটে? সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টায়, মে মাস থেকে নভেম্বর মাস পযন্ত সব চেয়ে বেশী ঝুঁকি থাকে। সাঁতার ক্লাব পত্রিকার সংবাদ সংগ্রহ করে এ গবেষণা পরিচালনা করে। ২০১৭ সালে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এর সার্ভের থেকে জানা যায়, প্রতিবছর প্রায় ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। এর চার গুণ অর্থাৎ প্রায় ৬৮ হাজার শিশু পানিতে ডুবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। মৃত্যুর এ হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পানিতে ডোবা প্রতিরোধে একটি জাতীয় কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অনুমোদন শেষে শিগগিরই তা জারি করা হবে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই এ ধরনের দুর্ঘটনায় শিশুকিশোর থেকে শুরু করে বয়স্করাও হারাচ্ছেন প্রাণ। বারবার এমন অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর ঘটনায় সচেতন মহলে উঠছে নানা প্রশ্ন। তাদের প্রশ্ন এসব মৃত্যু কি কেবল দুর্ঘটনা? সমুদ্রে যেসব প্রাণহানি ঘটছে তার বেশিরভাগই সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন স্পটগুলোতে হচ্ছে। নদীমাতৃক দেশে বাংলাদেশ সাঁতার জানা আবশ্যক। দেশের আনাচে কানাচে পুকুর, জলাশয়, হৃদ, খাল, ঝিরি, ছড়া, নদী ও হাওড়। দক্ষিণ পূর্বাংশ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি। তাই পানির দেশ বাংলাদেশে সাঁতার জানা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

সাঁতার না জানাতে প্রতি বছর হাজারো শিশু, কিশোর ও সাধারণ মানুষ মারা যায়। তাছাড়া জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা কবলিত অঞ্চলে অনেক মানুষ পানির স্রোতে ভেসে যায়। অথচ সাঁতার জানলে অনেক মানুষ বেঁচে যেতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থাতেও অনেক শিশু ও কিশোর অসাবধানতার কারণে পুকুরে, নদী ও সমুদ্রে ডুবে মরে। এই অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা কারোই কাম্য নয়।

স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং জীবন বাঁচানোর তাগিদে আমাদের ছোট বড় সকলকে সাঁতার জানা ও প্র্যাকটিস করা আবশ্যক। সাঁতার বাংলাদেশের জন্য উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় একটি খেলাও বটে।

উল্লেখ ভোলার মানুষও আশা করছে ভোলা জেলা প্রশাসন থেকে সাতার প্রশিক্ষনে জন্য যেন কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।

ফেসবুকে লাইক দিন