আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং, ১৭ই রমযান, ১৪৪৫ হিজরী
সর্বশেষঃ

ভোলায় যখন রূপকথার বিয়ে,ঘোড়ায় চড়ে বর,পালকিতে আসলেন কনে

বিশেষ প্রতিনিধি: এ যেন এক রূপকথার বিয়ের গল্প। ঘড়ির কাটা তখন দুপুর দেড়টা। ভোলা শহরের ব্যস্ততম যান্ত্রিক গাড়ির মাঝে হঠাৎ দেখা যায় লাল সেরওয়ানি ও লাল পাগড়ি পরে সুসজ্জিত ঘোড়ায় চড়ে সঙ্গে চার বেহারার পালকি নিয়ে বর সেজে কনের বাড়ি যাচ্ছেন আনোয়ারুল আজিম। বুধবার এমন রাজসিক বিয়ের ঘটনা ঘটেছে ভোলা পৌর শহরের গাজীপুর রোড এলাকায়। শত বছরের হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এমন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে বিয়ে দেখতে উৎসুক হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশুদের ঢল নামে কনের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়ন ছোট আলগী থেকে গাজীপুর রোড বরের বাড়ি পর্যন্ত পুরো এলাকা জুড়ে। বর আনোয়ারুল আজিম ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত। তিনি ভোলা পৌরসভা ২নং ওয়ার্ড গাজীপুর রোড এলাকার মো. আকবর হোসেনের ছেলে। কনে ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার ইরা। তিনি উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়ন ৮নং ওয়ার্ড ছোট আলগী গ্রামের ব্যবসায়ী লোকমান মিয়ার মেয়ে। এমন বিয়ের আয়োজন সম্পর্কে বর আনোয়ারুল আজিম বলেন, পালকিটা মূলত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আমার জন্মের পর থেকে কখনো বিয়েতে বাহন হিসেবে পালকি ও ঘোড়ার ব্যবহার দেখিনি। সেই ছোটবেলা থেকেই মনের মধ্যে একটা শখ জমে। বিষয়টা বাবা-মার সঙ্গে শেয়ার করি, কিন্তু একটা পর্যায় এসে এই আশাটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হয়। কারণ ভোলায় নেই কোন পালকির ব্যবস্থা। পরবর্তীতে এলাকার এক কাঠের দোকানে যোগাযোগ করলে অনেক কষ্টের পারে পালকির ব্যবস্থা হয়। তিনি আরও বলেন, আমি চাই বর্তমান তরুণ প্রজন্ম যারা ভবিষ্যতে বিয়ে করবে তারা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখুক। এতে করে আমাদের পুরাতণ যে ঐতিহ্য আছে তা ফিরে আসবে। বর আজিমের মা বিবি ফাতেমা বলেন, ছেলে ছোট বেলা থেকে গল্প শুনছে পালকিতে বউ নেয়া হতো এবং বড় ঘোড়ায় চড়ে আসতো। তখন থেকে শখ ছিলো তার বিয়েতে পালকি ও ঘোড়ার ব্যবহার হবে। তার বিয়ের বেলায় এমনটাই আমাদের কাছে আবদার করেছে, আমরাও তার কথা মতো আবদার রাখার চেষ্টা করেছি। বিয়েতে আসা ভোলা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. এরশাদ বলেন, আমরা এক সময়ে দেখেছি বিয়ে হলে পালকি ও ঘোড়ার ব্যবহার হতো। ধিরে ধিরে এটা হারিয়ে গিয়েছে। এই সময়ে এই প্রজন্ম এ ধরনের একটা উদ্যোগ যেনো পুরাতন ঐতিহ্যকে পূনরায় জীবিত করা, এটা একটা প্রসংশনীয় উদ্যোগ। পালকির বেহারা আমজাদ উদ্দিন বলেন, পালকি দেশের পুরাতন ঐতিহ্য, এক সময় বিয়েতে পালকির ব্যবহার হতো এখন আর হয়না। আগে আমরা পালকিতে করে বউ আনতাম-নিতাম, এখন আর বিয়াতে কেউ পালকি নেয় না, দেশেই এখন পালকি নাই। এদিকে, বিয়ে বাড়িতে ছিলো সুসজ্জিত পালকি ও ঘোড়াকে নিয়ে নানা কৌতুহল। কেউ তুলছেন সেলফি আবার কেউ কেউ পরিবার নিয়ে যৌথ ছবি তুলে স্মৃতি এ্যালবামে ধরে রাখতে ব্যস্ত।

ফেসবুকে লাইক দিন