আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
  • শনিবার, ৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং, ২৮শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৭ হিজরী
সর্বশেষঃ

ভোলা-বরিশাল সেতু: এক নদীর ওপারে লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি

মোঃ মহিউদ্দিন: বাংলাদেশের দক্ষিণের কোলে সবুজের পরশ মেখে দাঁড়িয়ে আছে একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীপ—ভোলা। নদীর বুকে জন্ম নেওয়া এই জেলার মানুষ যুগ যুগ ধরে প্রকৃতির দানে ধন্য হলেও বঞ্চিত হয়েছে একটি মৌলিক অধিকারে—যোগাযোগের স্বাধীনতা। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, সোনালি ধানের সুবাস, ইলিশের ঝাঁকে ঝাঁকে নৃত্য, আর নদীর তলদেশে সুপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস—সবই রয়েছে। কিন্তু প্রবাহমান নদী আর অনিশ্চিত নৌযান পারাপারের বাঁধনে ভোলার সম্ভাবনার জোয়ার যেন আটকে থাকে তীরে এসে। এই বাস্তবতার মাঝেই জন্ম নেয় এক স্বপ্ন—ভোলা-বরিশাল সেতু।
এটি আর কেবল ইস্পাত আর কংক্রিটের স্থাপনা নয়; এটি ভোলার মানুষের ন্যায্য দাবি, অগ্রগতির সিঁড়ি, বাঁচতে চাওয়া হাজারো পরিবারের নিঃশব্দ আর্তনাদ। একজন ভোলার সন্তান হিসেবে, একজন লেখক ও শিক্ষক হিসেবে, আমি অনুভব করি— এই সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি স্বাধীনতার শ্বাস। ১. অর্থনীতির নতুন দিগন্ত: সেতুর প্রতিটি খুঁটি হবে উন্নয়নের স্তম্ভ ভোলা যেন এক অবারিত ভাণ্ডার—ইলিশ, ধান, ডাল, তরমুজ, তরকারি; এক কথায় কৃষি ও মৎস্যের শক্ত ঘাঁটি। এখানে রয়েছে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র। কিন্তু দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা যেন এক অদৃশ্য শেকল বেঁধে রেখেছে সব সম্ভাবনাকে। ফেরিঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত পণ্যবাহী ট্রাক দেখে মনে হয়—
অর্থনীতির সোনালি রথ এখানে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু চাকার নিচে নেই পথ। ভোলা-বরিশাল সেতু হলে— পণ্যপরিবহন হবে দ্রুত ও সাশ্রয়ী
কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে বিপ্লব এই সেতু শুধু ভোলাকে নয়, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, এমনকি সারা দেশের জিডিপিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি হবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণ।
২. অসংখ্য প্রাণ বাঁচানোর বার্তা: স্বাস্থ্যসেবার দিকে এক সেতুবন্ধন ভোলার মানুষের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা আসে চিকিৎসার পথে।
যখন একটি অ্যাম্বুলেন্স রাতের অন্ধকারে চিৎকার করে এগোয়, তখন নদী পাড়ে এসে থমকে যায় জীবন আর মৃত্যুর লড়াই। ঝড়ো হাওয়া, উত্তাল নদী, অনিশ্চিত ফেরি—কত মানুষ যে চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকার পথে চোখ বুজেছে, তার হিসাব নেই। একটি সেতু মানে—
অ্যাম্বুলেন্স আর অপেক্ষায় থাকবে না রোগী দ্রুত পৌঁছাবে বরিশালের বা ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ঝড়-বৃষ্টির বাধা ভেঙে যাবে অসংখ্য পরিবার ফিরে পাবে নিরাপত্তার ঠিকানা যেন নদীর ওপার থেকে আশা ডেকে বলবে— “চল, জীবনের দিকে আমরা পৌঁছে দেব।” ৩. সামাজিক বিচ্ছিন্নতার অবসান: প্রজন্মের জন্য একটি উন্মুক্ত জানালা ভোলার মানুষ দেশের অংশ, তবে বাস্তবে তারা অনেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসী। চাকরির জন্য জেলার বাহিরে যেতে হলে ফেরিঘাটে দীর্ঘ অপেক্ষা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোচিংয়ে যেতে দেরি ব্যবসায়ীদের দৈনিক কর্মঘণ্টা নষ্ট সাধারণ মানুষকে সময়, শ্রম আর মানসিক চাপের মূল্য দিতে হয় ভোলা-বরিশাল সেতু হলে এই বাঁধা কেটে যাবে।
দেশের বাকি জেলার মতো ভোলাও পাবে একই নাগরিক সুবিধা। যুবসমাজের জন্য খুলে যাবে কর্মসংস্থানের দ্বার। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা—সব পথই হয়ে উঠবে উন্মুক্ত। ৪. পর্যটনের নবযুগ: প্রকৃতির সৌন্দর্য পাবে নতুন দর্শক পর্যটনের জন্য ভোলা যেন এক অজানা রত্ন।
মনোরম কুকরী-মুকরী, চর কুকরি, চরমাদার, চরফ্যাশনের সমুদ্রতীর, বনের নীরবতা—সবই অপূর্ব সৌন্দর্যে ভরা। কিন্তু যাতায়াতের সীমাবদ্ধতায় এগুলো যেন অচেনা থেকে যায়। সেতু হলে— পর্যটকের ঢল নামবে স্থানীয় হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠবে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ভোলার প্রকৃতি দেশের মানুষের কাছে নতুনভাবে পরিচিত হবেনদী, বাতাস আর বালুকাবেলার ওপর দাঁড়িয়ে ভোলা তখন বলবে— “এসো, আমার সৌন্দর্য তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।” ৫. ভোলার মানুষের প্রাণের দাবি: এক স্বপ্নের ডাক পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এখন ভোলার মানুষ বিশ্বাস করে— এই সরকারই পারে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে। ভোলা-বরিশাল সেতু কেবল প্রকল্প নয়; এটি একটি জেলা, একটি প্রজন্ম, একটি ভবিষ্যতের আবেদন। এই সেতু আমাদের জীবনের গতি, অর্থনীতির সম্ভাবনা, নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং জাতীয় সংহতির প্রতীক। শেষকথা: ভোলার কণ্ঠস্বরকে প্রজন্মের দাবি করে তুলুন দল-মত-নির্বিশেষে ভোলার ২২ লক্ষ মানুষ একটি স্বপ্নে একতাবদ্ধ— “আমাদের চাই ভোলা-বরিশাল সেতু।” এ দাবি কোনো বিলাসিতা নয়, কোনো রাজনৈতিক শ্লোগান নয়— এটি বেঁচে থাকার অধিকার, উন্নয়নের পথচিহ্ন। ভোলার প্রতিটি ঢেউ, প্রতিটি কৃষক, প্রতিটি মা, প্রতিটি শিক্ষার্থী আজ এক স্বরে উচ্চারণ করছে— “সেতু চাই। স্বপ্ন নয়, এখন অধিকার চাই।”

ফেসবুকে লাইক দিন