আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
  • শনিবার, ১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫শে অক্টোবর, ২০২৫ ইং, ২রা জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরী
সর্বশেষঃ

তিন ভাইয়ের রাজনীতির রাজবংশ; মোঃ মহিউদ্দিন

দেশের দক্ষিণ প্রান্তের এক অখ্যাত গ্রাম “চরধর্মপুর”—সেই গ্রামেই জন্ম হেজু, সাজু আর মজুর। ওরা তিন ভাই, তিনজনের রক্তে একই উৎস, কিন্তু পতাকা তিন রঙের। এক জন আ , এক জন বি , আরেক জন জা পার্টি।
লোকেরা হাসতে হাসতে বলে— “গ্রামের তিন নেতা—তিন ভাইয়ে ভাগ হয়ে গেছে রাজনীতি, কিন্তু রাত শেষে আবার এক ভাতের হাঁড়িতে হাত চলে তিনজনেরই।”
রাজনীতির বীজ; ওদের বাবা ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান—এক সময়ের তুখোড় রাজনীতিক, যিনি বিশ্বাস করতেন, ক্ষমতা মানে উন্নয়ন। কিন্তু সন্তানদের হাতে রাজনীতি এসে হয়ে গেল প্রতিযোগিতা। হেজু, সবচেয়ে বড় ভাই, আ পতাকা হাতে তুলে নেয়। সাজু, মধ্যম ভাই, বি ব্যানারে দাঁড়ায়—বলে, “জনগণ সরকার নয়, পরিবর্তন চায়।” আর মজু, ছোট ভাই, সবসময় হাসে— “তোমরা দুই ভাই ঝগড়া করো, আমি সমঝোতার রাজা। জা পার্টি মানেই সবার বন্ধু।” তিন দলের তিন মিছিল, তিনটি মঞ্চ, কিন্তু গ্রাম একটাই। সকালে যেই মাঠে হেজু সভা করে, বিকেলে সেই মাঠেই সাজু সমাবেশ ডাকে। আর রাতে? তিন ভাই বসে একই উঠোনে, এক হাঁড়িতে ভাত মিশিয়ে খায়—রাজনীতির কথা তখনও থেমে না।
ক্ষমতার খেলা; নির্বাচনের বছর এলে পুরো গ্রাম এক মহাযজ্ঞে ফেটে পড়ে।
পোস্টার, ব্যানার, শ্লোগান— “হেজু ভাই মানে উন্নয়ন!” “সাজু ভাই মানে পরিবর্তন!” “মজু ভাই মানে শান্তি!” লোকজন হাসে—
“যেই দলই জিতুক, জয় তো তাদেরই বাড়ির!” ফলাফল আসে—এইবার হেজু জেতে। সাজু হারে, মজু তৃতীয় স্থানে।
কিন্তু হার মানে এখানে পরাজয় নয়। রাতে সাজু এসে বলে, “ভাই, তোমার সরকার, কিন্তু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমি চাচ্ছি।” হেজু হাসে, “ঠিক আছে রে, গ্রামের শান্তির জন্য মেনে নে।” মজু ফিসফিস করে, “তোমরা ঝগড়া করো না, আমি তো উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হবো।” এভাবেই চলে তিন ভাইয়ের অদ্ভুত সমঝোতার রাজনীতি— বাইরে প্রতিপক্ষ, ভেতরে এক রক্তের বন্ধন। রাজনীতির পারিবারিক রসায়ন- গ্রামের মানুষ ভাবে—ওরা তিন দল তিন দিকে টানে, অথচ ওদের সংসার চলে একই টেবিলে। যখন ফুটবল ক্লাবের সভাপতির নির্বাচন হয়, সাজু ক্ষোভে বলে, “দল নাই, তবু ফুটবলের সভাপতি তুই? এ কেমন অবিচার?” হেজু হাসে, “ক্ষমতা তো স্থায়ী ভাই, দল না থাকলেও আমার সুনাম আছে।” তখন মজু হেসে বলে, “ক্ষমতা ফুটবলের মতোই, আজ আমার পায়ে বল, কাল তোমার।” এইভাবে ফুটবল, স্কুল কমিটি, বাজার সমিতি—সবখানেই তিন ভাইয়ের পরিবার আধিপত্য রাখে। যে দল ক্ষমতায় থাকুক না কেন, গ্রামের মানুষ জান— “শেষমেষ তিন ভাইয়েরই জয়।” রাতের আলাপ- প্রতিদিন রাতে তারা তিনজন বসে গ্রামের উঠোনে চা খায়। দূর থেকে রাজনৈতিক পোস্টারগুলো হাওয়ায় দুলতে থাকে— একটায় শে মুখ, একটায় খা, আরেকটায় এ– র পুরনো হাসি। তবু ওদের হাসি এক। হেজু বলে, “রাজনীতি তো এখন পারিবারিক শিল্প।” সাজু বলে, “ক্ষমতা মানে পরিবারকে টিকিয়ে রাখা।” মজু বলে, “আমরা তিনজন তিন পতাকা, কিন্তু মূলত এক মঞ্চের ।” আকাশের দিকে তাকিয়ে তিন ভাই নিঃশব্দে চেয়ে থাকে— চাঁদ যেন ওদেরই প্রতিফলন, তিন টুকরো হলেও একটাই আলো। সমাপ্তি– বছরের পর বছর কেটে যায়। নির্বাচন বদলায়, পোস্টার বদলায়, কিন্তু চরধর্মপুরে হেজু–সাজু–মজুর গল্প একই থেকে যায়। গ্রামের লোকজন বলে— “এই তিন ভাইয়ের রাজনীতি মানেই তিন রঙের পতাকা, এক ছাতার সংসার।” রাজনীতির জোয়ারে ভেসে গিয়েও ওদের পরিবার টিকে আছে— ভালোবাসা আর ক্ষমতার এক অদ্ভুত মিশ্রণে। কারণ, রাজনীতি ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু রক্তের বন্ধন—চিরস্থায়ী। লেখক : কবি, সাহিত্যিক, সিনিয়র লেকচারার

ফেসবুকে লাইক দিন