আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ রবিবার, ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং, ৯ই রবিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
সর্বশেষঃ

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে

হেলাল উদ্দিন লিটন, তজুমদ্দিন (ভোলা): আধুনিক, ডিজিটাল ও স্মাটের ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি কালচার কাচারি ঘর অস্থিত্ব হারিয়ে বিলুপ্তির পথে। এক
সময় কাচারি ঘর ছিলো গ্রামের আভিজাত্যের প্রতীক। বাড়ির বাহিরে আঙ্গীনায় দরজার মাথায় অতিথি, মুসাফির, ছাত্র ও জায়গিরদের থাকার এই ঘরটিকে কাচারি ঘর নামে চিনতেন এলাকাবাসী। কাচারি ঘরটি বাড়ির দরজায় ঘাটলার কাছে স্থাপন করায় বাড়ির সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যেত। কাচারি ঘরে অতিথি, পথচারী, মুসাফির, বাড়ির ছেলেরা রাত্রিযাপন করতেন। যে কারণে সেই সময় রাতের বেলায় বাড়িতে চুরি-ডাকাতি কম হতো বলে অনেকে মত দেন। কাচারিতে বাড়ির স্কুল কলেজগামী ছেলে-মেয়রা পড়াশুনা করতেন পাশাপাশি সকাল বেলা এটি মোক্তব হিসেবে ব্যবহার হতো। আধুনিকতার কারণে বাড়ির সৌন্দর্য কাচারি ঘর এখন আর চোখে পড়ে না
প্রায় বিলুপ্তির পথে। আলাপকালে জানা যায়, ঈশা খাঁর আমলে কর্মচারীরা বাড়ির দরজায় অবস্থিত কাচারি ঘরে বসে খাজনা আদায় করতেন। যখন দেশে জমিদারী প্রথা যখন চালু ছিলো তখনো গ্রামের প্রভাবশালী মোড়লদের বাড়ির দরজায় কাচারিতে বসে খাজনা আদায় করা হতো। শালিস বিচারসহ গ্রামের সকল সামাজিক কাজগুলি পরিচালিত হতো কাচারি ঘরে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইট-পাথরের গাঁথুনিতে একেবারেই বিলুপ্তির পথে কাচারি ঘর। তজুমদ্দিন উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে দুই-একটি বাড়িতে কাচারি ঘর দেখা গেলেও রয়েছে অযতেœ-অবহেলায় পরিত্যাক্ত অবস্থায়। নেই আর কাচারি ঘরে সেই চিরচেনা শিক্ষার্থীদের পড়ার আওয়াজ, রাতের বেলায় জারীগান, লুডু খেলা অতিথিদের গল্প-আড্ডা, সকাল বেলায় মোক্তবে আরবি পড়ার মধুরসুর। এখন আর দিনের বেলায় কাজের শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম
নিতে দেখা যায় না কাচারি ঘরে। কোথাও কোথাও এক সময়ে বাড়ির সৌন্দর্য কাচারি ঘর অযতœ আর অবহেলার কারণে এখন গোয়াল ঘরে পরিনত হয়েছে। চাঁদপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আবুল হোসেন মাষ্টার বাড়ির মো. আরিফুর রহমান বলেন, আমার পিতা জীবিত থাকতে আমাদের বাড়ির দরজায়
অবস্থিত থেকে কাচারি ঘরটি আর মেরামত হয় না। তেমন কোন কার্যক্রমও নেই। সময়ের পরিক্রমায় যে স্মৃতি কাচারি ঘরটি আছে সেটিও কখন যে হারিয়ে যাবে তা এখন দেখার বিষয়। আলাপকালে চাঁদপুর ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও চাঁদপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জোসেব মিয়া বলেন, দেশ আধুনিক পর ডিজিটাল ও স্মাটের ছোঁয়ায় এক সময়কার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবুও পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের আড়ালিয়া আব্দুল জব্বার আলী হাওলাদার বাড়িরসহ কয়েকটি বাড়িতে শুধুমাত্র কাচারি ঘর রয়েছে। কিন্তু কাচারি ঘর থাকলেও কোন কার্যক্রম এখন চলমান নেই। ঘরগুলি রয়েছ পরিত্যাক্ত অবস্থায়।

ফেসবুকে লাইক দিন