আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ সোমবার, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মে, ২০২৪ ইং, ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
সর্বশেষঃ

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের কথা

মোঃ হেলাল উদ্দিনঃ
“বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি, চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘নারী’ কবিতার এই দুই লাইনের মাধ্যমে সহজেই বুঝা যায় বিশ্বের সার্বিক কল্যাণে নারীশক্তি কতোটা অপরিহার্য। বিশ্বে সুস্থ-নিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। নারীর এই কাজের স্বীকৃতি এবং সমাজে নারীদের সুস্পষ্ট অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৮ই মার্চ পালিত হয় “আন্তর্জাতিক নারী দিবস”। বিশ্বের বিভিন্ন দেশজুড়ে ১৯১৪ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হলেও জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো নারী ও পুরুষের সমঅধিকার আদায়।
নারীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অর্জনকে স্মরণ করার জন্য এবং তাঁদের উৎসাহিত করে তোলার জন্য প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। নারী দিবসের মাধ্যমে জেন্ডার সমতা, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা, নারী-পুরুষের একতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ ইত্যাদির উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কেননা নারীদের কৃতিত্ব ও অবদান পৃথিবীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো অংশেই কম নয়। বর্তমান বিশ্বে নারীরা গৃহিনী হতে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ নানান ক্ষেত্রে কর্মরত। কিন্তু ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা যায়। বিশেষ করে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তেমনভাবে এখনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না, অথচ নারীর সুস্থতায় পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সুস্থতা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে মানসিক সমস্যার প্রাদুর্ভাব বেশি এবং নারীদের মধ্যে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন নারী কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। নারীদের সাধারনত একান্ত নিজস্ব যে মানসিক সমস্যাগুলো হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গর্ভকালীন বিষন্নতা, মাসিকের আগে ও পরে ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া, মেনোপজের আগে ও পরে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়া ইত্যাদি। তবে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তা হল- হতাশা এবং উদ্বেগ। যা নারীদের বিকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কেননা নারীদের এই মানসিক সমস্যাগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাজ এড়িয়ে যেতে চায় এবং কম গুরুত্ব দেয়।
বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে বোঝা যায় যে একজন নারীর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ্ (National Institute of Mental Health -NIMH) এর মতে, একজন নারীর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা তা বুঝার , বিভিন্ন উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-

১. প্রতিনিয়ত দুঃখ বা হতাশার অনুভূতি
২. মাদকাসক্তি
৩. অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা
৪. খাওয়া ও ঘুমের অভ্যাসের আকস্মিক পরিবর্তন
৫. ক্ষুধা কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া
৬. প্রতিনিয়ত ক্লান্ত অনুভব করা
৭. হ্যালুসিনেশন হওয়া
৮. ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন
৯. শারীরিক কোনো সমস্যা ছাড়াই মাথাব্যাথা ও হজমের সমস্যা
১০. নিজেকে ধীরে ধীরে সমাজ থেকে গুটিয়ে নেওয়া
১১. আত্মহত্যা করার প্রবনতা।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় কিছুটা কঠিন কেননা আমাদের সমাজে নারীদের বরাবরই উপেক্ষিত, যদিও মানসিক স্বাস্থ্য প্রত্যেকের জন্যই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের এই মানসিক সমস্যাগুলো কিছুটা কমানোর জন্য বা রোধ করবার জন্য দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যেমন-
১. স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য গ্রহন,
২. নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস,
৩. মাদক ও এলকোহল আসক্তি থেকে দূরে থাকা,
৪. নিয়মিত শরীরের যত্ন নেওয়া,
৫. পরিমিত পরিমাণে ঘুমানো,
৬. পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সুন্দর সময় কাটানো,
৭. যেকোনো মানসিক সমস্যা হলে চিকিৎসক বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া।
নারীদের যেকোনো মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে নিজেকে সবার আগে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং কুসংস্কার থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে। বর্তমানে আমাদের সমাজের শিক্ষিতজনদের মাঝে অনেকেই নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলোকে সবার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন এবং এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করছেন। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে সবাই নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবেন এবং সমাজে সমতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সকল নারীর প্রতি শুভেচ্ছা। (মোঃ হেলাল উদ্দিন- শিক্ষক, লেখক ও গবেষক)।

ফেসবুকে লাইক দিন