আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ শুক্রবার, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মে, ২০২৪ ইং, ১লা জিলক্বদ, ১৪৪৫ হিজরী

কর্মজীবী নারী, কর্মজীবী মা

সাইয়েদাতুননেছা, বরগুনা: নারী শব্দটি নানাবিধ ভাবে তৎপর্যপূর্ন কারন একজন নারী কখনো মা, কখনো মেয়ে, কখনো অর্ধাঙ্গী, কখনো ভগীনি। এই নারীত্বের যেমন রয়েছে বিশেষ গুণ, বিশেষ ক্ষমতা তেমনি রয়েছে বিশেষ কিছু অক্ষমতা, বিশেষ কিছু সীমাবদ্ধতা। যদিও নারী ক্ষমতায়নের এই স্বর্ণযুগে নারীর অক্ষমতা আমরা মেনে নিতে নারাজ। তবুও সত্যকে সত্য বলে জানাই ভালো। নারী পুরুষ কখনোই সমান নয়, পরিপূরক। কারন প্রকৃতিগত ভাবেই নারীদের রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা এবং কিছু বিশেষত্ব। তাই চাইলেই একজন নারী পুরুষের সমান হতে পারেনা। কিছু ক্ষেত্রে পুরুষ পারদর্শী, কিছু ক্ষেত্রে নারী। তাই নারী পুরুষের সমান কর্মদক্ষতা দাবি করা যেমন বোকামি তেমনি সমান অধিকার দাবি করাও বোকামি। নারী ক্ষমতায়নের এই যুগে নারী আজ পোশাক শ্রমিক থেকে পাইলট সব ক্ষেত্রে তাদের পদচারণা। নারীর ক্ষমতায়ন আসলে কতটুকু হয়েছে?ক্ষমতায়নের কথা বলে নারীকে ঘর থেকে বের করে আনা হযেছে, কিন্তু ঘরের বাইরে নারীকে কতটুকু নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে? আমাদের সমাজ ব্যবস্তায় গৃহিণীকে পেশা হিসাবে দেখা হয়না যদিও বেশিরভাগ নারী তাদের আধিকাংশ সময় গৃহকর্মে দিচ্ছেন। আথচ নারীকে বলা হয় তুমিও পুরুষের মতো সব কিছু পারবে, তুমিও রাস্তায় সাইকেল চালাতে পারো, তুমিও ফুটবল খেলতে পারো, তুমিও পুরুষ সাংবাদিকের মতো সংবাদ সংগ্রহ করতো পারো কিন্তু এসব করতে গিয়ে নারীকে যে কতোরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাকি কখনো ভেবে দেখেছি? কর্মক্ষেত্রে গিয়ে একজন নারী শ্রমিক অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছে ঠিকই কিন্তু তিনি প্রতিনিয়ত কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সন্ত্রাস, যৌন হয়রানির মতো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে এমনও শোনা যায়। নারীকে গর্ভকালীন সময়েও পুরুষের সমান কাজ করতে হয়। এই কঠিন মূহুর্তেও তাকে প্রমান করতে হয় সেও পুরুষের মতো সমান কাজে পারদর্শী। কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি তাকে তার পরিবার সামলাতে হয়, সন্তানকে যথাযথ সময় দিতে হয়। পরিবার, সন্তান তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারীর মমতা আর আবেগের জায়গা। আর সন্তানের কাছেও মায়ের কোন বিকল্প নেই। কিছু কাজ সৃষ্টিকর্তাই মায়েদের জন্য অবধারিত করে রেখেছেন, এগুলো মায়ের বিকল্প দিয়ে সম্ভব নয়। তার মানে এই নয় যে নারী কর্মক্ষেত্রে আসবেনা, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবশ্যই নারীর কর্মক্ষেত্রে আসার দরকার আছে। উচ্চ শিক্ষায় ভালো করার পাশাপাশি তারা নানান পেশায় প্রবেশ করছে। একজন নারী চিকিৎসকের কাছে একজন নারী রোগী যেমন কমফোর্টফিল করেন তেমনি একজন নারী শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা একজন নারী শিক্ষক ভালো বুঝবেন। তাই কর্মক্ষেত্র থেকে নারীকে সরিয়ে নয় , বরং একটা নিরাপদ, নারীবান্ধব কর্মপরিবেশে নারীকে রাখা সময়ের দাবি। নারীর জন্য হতে পারে স্বতন্ত্র এবং র্নিধারিত কর্মঘন্টা ও নির্ধারিত কর্মপরিবেশ। প্রতিষ্ঠানের সহমর্মিতা, সহনশীলমাত্রার কর্মঘন্টা। যথাপোযুক্ত মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মক্ষেত্রে শিশুযত্ন কেন্দ্র, নতুন মায়েদের জন্য একটা আলাদা জায়গা থাকা যেখানে শিশুটিকে নিরাপদে রাখা যাবে, ব্রেস্টফিডিং করানো যাবে, এককথায় শিশুবান্ধব পরিবেশ থাকা। এতে করে নারীর কাজে মনোযোগ দেয়া অনেক বেশি সহজ হবে যার সুফলটা অফিসই পাবে। অনেক কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য পর্য়াপ্ত ওয়াশরুম ও কমনরুম নেই। তাই কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সংবেদনশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। কারন মাতৃত্বকে ভুলে একজন নারী কখনো সফল কর্মজীবী হতে পারে না। সন্তানের অনিরাপত্তা একজন কর্মজীবী মাকে এতটাই উৎকন্ঠিত রাখে যে সে কর্মে মনোনিবেশ করতে পারে না। ফলে তার কাজের মান নষ্ট হয়। অন্যদিকে বাচ্চা নিয়ে অফিসে গেলে অনেকেই অনেক অনাকাংখিত বক্তব্য ছুড়ে দেয়। এ সকল দিক বিবেচনায় রেখে নারীর কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ঠিক করা দরকার। তাহলেই একজন কর্মজীবী নারী, একজন কর্মজীবী মা পৌছতে পারবেন সফলতার শিখরে। (লেখক- প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস, পূর্ব গুদিঘাটা সালেহিয়া কামিল মাদ্রাসা, বরগুনা।)

ফেসবুকে লাইক দিন