আজ গণ-অভ্যুত্থান দিবস!!
বিপ্লব মন্ডল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ আজ ২৪ শে জানুয়ারি, ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান দিবস। ১৯৬৯ সালের আজকের দিনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সর্ব স্তরের পূর্ববাংলার জনগন রাস্তায় নেমে আসে।
মূলত ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচি গণ-অভ্যুত্থানের পথ সৃষ্টি করেছিল। ১১ দফা ঘোষণার পর ছাত্র আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। ১৯৬৯ সালের ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সরকারও ১৪৪ ধারা জারি করে রাখে। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে মিছিল বের করে। পুলিশ মিছিলে গুলি করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আসাদুজ্জামান মৃত্যু বরন করেন। ডাকসুর তৎকালীন ভিপি ছাত্র নেতা তোফায়েল আহমেদ শহীদ আসাদের লাশ কাধে নিয়ে রাজ পথে মিছিল করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আসাদের মৃত্যুতে ৩ টি কর্মসূচি ঘোষণা করে। ২১ জানুয়ারি ঢাকায় হরতাল, ২২ জানুয়ারি শোক দিবস, ২৩ জানুয়ারি মশাল মিছিল।
২৪ জানুয়ারি পূর্ব ঘোষিত হরতালে ঢাকা শহরের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সরকার শহরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। সচিবালয়ের সামনে সেনাবাহিনী ছাত্র কর্মী রুস্তম আলী ও নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউরকে গুলি করে হত্যা করে। পল্টনে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়। ভীত হয়ে সরকার গভর্নর হাউসের চারিদিকে ট্যাংক ও কামান মোতায়েন করে।ছাত্র জনতা ইকবাল হলের সামনে সমাবেশ করে। এ সমাবেশে শহীদ মতিউরের পিতা সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করে লাখ লাখ ছাত্র জনতাকে মতিউর বলে সম্বোধন করেন। ফলে এক অভূতপূর্ব আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সভা থেকে পরের দিন সর্বাত্মক হরতাল পালনের ঘোষণা করা হয়।
এ ভাবে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বৈরশাসক আয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীরা মুক্ত হন। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধুর মুক্তি উপলক্ষ্যে রেসকোর্স ময়দানে গণসংবর্ধনা এবং অন্যান্য রাজনীতি বিদদের মুক্তি উপলক্ষ্যে পল্টনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে। সেখানে সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে পরিষদের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ” বঙ্গবন্ধু ” ভুষিত করেন। গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য প্রতিবছর ২৪ শে জাুয়ারি গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসাবে পালন করা হয়।