আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ মঙ্গলবার, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মে, ২০২৪ ইং, ১২ই জিলক্বদ, ১৪৪৫ হিজরী
সর্বশেষঃ

ঝালকাঠির চার নদীর মোহনায় নিঝুম চরে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম।

মশিউর রহমান রাসেল, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠি সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সুগন্ধা, বিশখালী, গাবখান ও ধানসিঁড়ি নদী। এই চার নদীর মোহনার পশ্চিমদিকে গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পোনাবালিয়া ইউনিয়ন এবং উত্তর-পূর্ব কোণে ঝালকাঠি পৌর এলাকা। শীতকালের অতিথি পাখিরা আশ্রয় নিয়েছে বিশখালী নদীর পশ্চিম পাড়ে গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ভাটারাকান্দা ও পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকূল গ্রামের বিশখালী নদী তীরবর্তী সাচিলাপুর এলাকার নিঝুম চরে। প্রতিবছরই শীত মৌসূমে অতিথিপাখিরা নিরাপদ মনে করে এই এলাকায় অবস্থান নেয়। পাখির কিচিমিচর ডাক ও কলকাকলিতে মুখোরিত পুরো এলাকা। মাঝে মধ্যে পাখি শিকারীরা হানা দিলেও এলাকাবাসীর তোপের মূখে ব্যার্থ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নিঝুম গ্রাম চর সাচিলাপুর। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বিশখালি নদীর বিস্তীর্ণ চরে সুনসান নীরবতা।
জায়গাটিতে সড়ক এবং নৌপথ দুটোতেই সহজ যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। প্রাকৃতিক নৈসর্গিক এ স্থানটিকেই পাখিরা বেছে নিয়েছে। নদী আর বিস্তীর্ণ এই চরে লাখ লাখ পাখির যেন মেলা বসেছে। কখনো জলে ভেসে আবার কখনো নিঝুম চরে ঝাঁকে ঝাঁকে খেলায় মত্ত শীতের অতিথি পাখির দল। গ্রামবাসীর ভালোবাসায় প্রতি বছর শীতের এই সময়টায় আগমন ঘটছে এসব অতিথিদের। শিকারিদের রক্তচক্ষু থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয়দের দেখভালে চলছে অতিথি বরণ। বিশখালি নদীপাড়ের বাসিন্দা আব্দুল আলিম জানান, গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শীতের এই সময়টা এখানে অতিথি হয়ে আসছে অগণিত জলে ভাসা পাখির দল। বিশখালির জলে ভেসে সকাল-সন্ধ্যা চলে জলকেলি। আবার কখনো শুকনো চরে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অগণিত পাখির সমাবেশ চলে। তবে মানুষের আনাগোনার শব্দ পেলেই আকাশ ঢেকে যায় পাখির ডানায়। গ্রামের আরেক বাসিন্দা জোবেদা বেগম বলেন, এখানে আসা অতিথি পাখিদের মধ্যে বেশির ভাগ বালিহাঁস প্রজাতির। তবে পানকৌড়ি, বকসহ অন্যান্য পাখিও রয়েছে। আমরা এই পাখিদের পাহাড়া দিয়ে রাখি। প্রতি বছর শীত শেষে গ্রীষ্মের মৌসুম শুরু হলেই অতিথি পাখির দল ফিরে যায় তাদের নিজস্ব ঠিকানায়। তবে পরম ভালবাসায় নিয়ে বিশখালি নদীর পাড়ের এ গ্রামবাসী অপেক্ষায় থাকে অতিথি বরণের অপেক্ষায়। জানা গেছে, প্রতিবছর শীতে দূর-দূরান্ত থেকে অতিথি পাখিরা আসে আমাদের দেশে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ পাখি দেখতে ভিড় করে বিভিন্ন জলাশয়ে। পাখিদের কলকাকলি প্রকৃতির শোভা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। আবাসিক ও অতিথি পাখি মিলে আমাদের দেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬০ প্রজাতি আবাসিক। বাকি ৩০০ প্রজাতি অতিথি পাখি। সব অতিথি পাখি শীতের সময় আসে না। ৩০০ প্রজাতির মধ্যে ২৯০টি শীত মৌসুমে আসে ও ১০টি প্রজাতি থেকে যায়। ব্যবসায়ী শামসুল হক মনু জানান, শীত এলেই এসব জলাশয়, নদীর তীরের নিরাপদস্থানসহ বিভিন্ন হাওর, বিল ও পুকুরের পাড়ে চোখে পড়ে নানা রং-বেরং এর নাম জানা, অজানা পাখির। অথচ বেআইনিভাবে শিকার হচ্ছে এসব পাখি। অতিথি পাখি আমাদের বন্ধু, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব ও আমাদের প্রেরণা। এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। এই পাখিগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি আরও জানান, অতিথি পাখিদের বিচরণভূমি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বন-জঙ্গল কেটে উজাড় করে ফেলায় পাখিরা হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আশ্রয়। আবার ফসলি জমিতে কৃত্রিম সার এবং মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বিষে আক্রান্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে মারা যাচ্ছে। বন্য প্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পরিযায়ী (অতিথি পাখি) পাখি হত্যার দায়ে অপরাধীকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ একলাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। একইভাবে কোনো ব্যক্তি যদি পরিযায়ী পাখির মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করেন, দখলে রাখেন কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করেন বা পরিবহন করেন, সে ক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদন্ড এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার আইন প্রচলিত রয়েছে। অতিথি পাখি নিধন এবং বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ জেনেও আইনের ফাঁকে এক শ্রেণির পেশাদার এবং শিকারি কাজগুলো করে চলেছে।
ঝালকাঠি সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসাম্মাৎ জেবুন্নেছা জানান, পাখিদের বাসস্থান সংকট, বিষটোপ ব্যবহার করে খাদ্য সংকট, জীবন বিপন্ন করা, শিকার, পাচারসহ ইত্যাদি কারণে আশঙ্কাজনক হারে আমাদের দেশে শীতে পাখি আসার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। তবে আমরা সচেতন না হলে আইন প্রয়োগে খুব একটা সফলতা পাওয়া যাবে না। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদেরও সহযোগিতা করতে হবে। গাবখান ধানসিড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম মাসুম বলেন, মাঝেমধ্যে জেলা শহর বা অন্যান্য এলাকা থেকে লোকজন পাখি শিকারে আসে। তবে তাদের প্রতিহত করেন গ্রামের সাধারণ মানুষজন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদও দেখভাল করে। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে অতিথি পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে জেলা প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।

ফেসবুকে লাইক দিন