আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ ইং, ২০শে মুহাররম, ১৪৪৬ হিজরী
সর্বশেষঃ

সুন্দরবনে নিষিদ্ধকাল শুরু

মোংলা প্রতিনিধিঃ মা ইলিশ সংরক্ষণে মোংলার সাগর ও সুন্দরবন উপকূলে বুধবার (১১ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে শুরু হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২দিন ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ শিকার বন্ধ থাকবে। এছাড়া মা ইলিশের ডিম ছাড়া নিরাপদ করতে এ পুরো সময় জুড়ে জেলেদের সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান ও চাল সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। এবার এমনিতে তেমন একটা ইলিশ পাননি তারা। এর আগে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা মাছ ধরতে নামলে দুদফায় বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েন। ফলে আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পাল্লা ভারি হয়ে পড়েছে জেলেদের। আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ২২দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখানকার কয়েক হাজার জেলের একমাত্র জীবিকার পথ বন্ধ হলে খেয়ে না খেয়ে ধার-দেনা করে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে তাদের। একটি পরিবারকে ২৫কেজি করে যে চাল দেওয়া হয় তাও অপ্রতুল। এখানে নিবন্ধিত ইলিশের জেলে আছেন ২ হাজার ৩০০। আর অনিবন্ধিত আছেন আরও প্রায় ২হাজার জেলে। এ সময় নিবন্ধিত জেলেরা পাবেন ২৫ কেজি করে চাল। আর এ সহায়তা বঞ্চিত থাকবেন অনিবন্ধিত জেলেরা।
স্থানীয় জেলে সুজিত রায় বলেন, আমাদের ২২ দিন বসে থাকতে হবে। এ সময় আয় থাকবে না, ধার করেই চলতে হবে। তিন দফায় জাল-নৌকা নিয়ে নেমে কোন মাছ পাইনি, মাছও কম।
আরেক জেলে ভুট্ট সরকার বলেন, অবরোধ শুরু হচ্ছে, এর আগে দুদফায় বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরতে পারিনি। এরপরও নদীতে নেমে মাছ পাইনি। ২৫ কেজি করে যে চাল দেওয়া হয় তাতে আমাদের হয় না কিছু। তা আবার কেউ পায় আবার কেউ পায় না।
জেলে বাবুল খাঁন বলেন, ২২ দিনে আমাদের ক্ষতি হবে অনেক, খেয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। এর আগে সামান্য যে মাছ পেয়েছি তাতে খরচও ওঠেনি। লোকসানে আছি। আর এখন মাছ পাওয়ার সময় ঠিক তখনই আবার অবরোধ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের ১২ মাসই ধাপে ধাপে থাকে সাগর ও সুন্দরবনে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা। এরমধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১৫দিন করে একমাসের অবৈধ জালের ব্যবহার নির্মূলে কম্বিং অপারেশন, ২০মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সামুদ্রিক ও সুন্দরবনের মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে অবরোধ, ১ নভেম্বর থেকে ৩০জুন পর্যন্ত ৮মাস ঝাটকা সংরক্ষণ অভিযান আর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার অভিযান চালানো হয়।
আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগও। ফলে উপকূলের জেলেদের দুঃখ দুর্দশার যেন শেষ নেই। তারা যেমনি পান না পর্যাপ্ত সহায়তা তেমনি নেই বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগও। এরপরও এ পেশায় খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছেন উপকূলের হাজার হাজার জেলে ও তাদের পরিবার।
মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। আর অক্টোবরে মা ইলিশ ডিম দিয়ে থাকে। তাই মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ ডিম দিয়ে প্রজনন বৃদ্ধির জন্য ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হচ্ছে। ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ মাছ শিকার করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন।

ফেসবুকে লাইক দিন