আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ রবিবার, ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই মে, ২০২৪ ইং, ২রা জিলক্বদ, ১৪৪৫ হিজরী

ভোলায় স্যাপ বাংলাদেশের আয়োজনে বিশ্ব কন্যা শিশু দিবস ২০২৩ পালন

ভোলার খবর ডেস্কঃ আজ প্লান ইন্টার ন্যাশনাল এর অর্থায়নে স্যাপ বাংলাদেশ এর আয়োজনে বিশ্ব কন্যা শিশু দিবস ২০২৩ পালন করা হয়।
এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য “বিনিয়োগে অগ্রাধিকার-কন্যা শিশুর অধিকার।” প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ রাষ্ট্রসমূহ ১১ অক্টোবর এ দিবসটি পালন করে। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ‘কারণ আমি একজন মেয়ে’ (Because I Am a Girl) নামক আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে এই দিবসের সূচনা ঘটে। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারিখে এই প্রস্তাব রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় গৃহীত হয় ও ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৪ সালে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে কাজ শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৭টি জেলার ১০টি উপজেলায় সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে অংশগ্রহনমূলক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ৩৫টি সেবাদানকারী সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় সহযোগী সংস্থা স্যাপ বাংলাদেশ কর্তৃ‌‌ক ভোলা সদর উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশুদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে, বক্তব্য, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়। আয়োজিত অনুষ্ঠানে, ক্ষুদে বক্তা হিসেবে কন্যা শিশুর অধিকার, বর্তমানে সমাজে তাদের অবস্থান এবং সমাজপতিদের করনীয় নিয়ে বক্তব্য রাখে ভোলা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমদি হোসেন আরাফ তার বক্তব্যে বলে, নারী এবং মেয়েরা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আজকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত মেয়ে এবং আগামী দিনের কর্মী, উদ্যোক্তা, পরামর্শদাতা, গৃহিণী, রাজনৈতিক নেতা এবং মা। মেয়েদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা শুধুমাত্র তাদের একটি মৌলিক মানবাধিকার নয়, অন্যান্য সকল উন্নয়ন সেক্টরেও এর বহুমুখী প্রভাব রয়েছে।
ইসলাম ধর্মে কন্যা শিশুদের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এ সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বানী রয়েছে-
‘তোমাদের সন্তানদের মধ্যে মেয়েরাই উত্তম।’
‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম-যার প্রথম সন্তান মেয়ে।’
‘যে ব্যক্তি একটি কন্যা সন্তানের ভরণ-পোষণ করেছে তার জন্য বেহেশত নির্ধারিত হয়ে গেছে।’
এ কথা অনস্বীকার্য যে, কন্যা-জায়া-জননীগণ অন্ধকারাচ্ছন্ন, কুসংস্কার, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও ধর্মীয় আবরণে হাজার হাজার বছর ধরে যেরকম নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছিল, অধিকার বঞ্চিত হয়েছিলো তা বর্তমান বিশ্বে অনেকটাই কমে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা নিজের অধিকার আদায়, গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। তথাপি বিশ্ব বাস্তবতায় কন্যা শিশুর শারীরিক যত্ন, একটি নিরাপদ, সমতাভিত্তিক সমাজ ও তাদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার সমূহ এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা, ইউনিসেফের হিসেবে, বাংলাদেশে এখনো ৫৯ শতাংশ মেয়েরই বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়স হবার আগেই। এখনো দেশে দেশে নানান স্থানে, নানান ভাবে মেয়ে শিশুদেরকে বঞ্চিত করা হয়। তাদের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পোষাক-পরিচ্ছেদসহ নানা মৌলিক চাহিদা থেকেই বঞ্চিত করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কন্যাশিশু বঞ্চিত হয় তার নিজের ঘরে, নিজের বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে। তাই কন্যা শিশুর জন্য একটি সমতাভিত্তিক নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। সুতরাং কন্যা শিশু দিবস পালনের গুরুত্ব কম নয়। আগামীর বিশ্ব হোক কন্যাদের জন্য নিরাপদ। সকল কন্যা শিশুদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, জনাব মোঃ দেলোয়ার হোসেন, তিনি কন্যা শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, কন্যা শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে কন্যা শিশুরাই রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে। শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে তুলবে উন্নত-সমৃদ্ধ নতুন বিশ্ব। আমাদের আরো গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে৷ সমাজে লিঙ্গবৈষম্যের যে সুদূরপ্রসারী শিকড় রয়েছে তাকে উপড়ে ফেলতে হবে৷ বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভেতরের সমস্যাগুলিকে বুঝতে হবে৷ মেয়েদের ওপর এই মানসিকতার কেমন প্রভাব পড়ছে, তা সহজ করে বোঝাতে হবে সমাজের সবাইকে।
স্যাপ বাংলাদেশের ভোলা জেলার মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, স্যাপ বাাংলাদেশ, প্লান ইন্টার ন্যাশনাল এর পৃষ্ঠপোষকতায় ভোলা জেলায় কন্যা শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন,পরিবারের দারিদ্রতার কারনে এখনো নিজের ১২ বছর মেয়েটিকে স্কুলে না দিয়ে কোন বাসাবাড়িতে কাজে করতে দিচ্ছেন। কন্যা শিশুর ব্যাপারে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টানো অতীব জরুরী। কন্যা শিশুর ন্যায্য অধিকার আমাদের সমাজের পরিবার থেকেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অনুষ্ঠান শেষে প্রতিযোগীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে কন্যা শিশুদের সাফল্য কামনা করা হয়।

ফেসবুকে লাইক দিন