আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
  • মঙ্গলবার, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ই নভেম্বর, ২০২৫ ইং, ১৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরী
সর্বশেষঃ

আর্যরা কী ভারতে বহিরাগত?

ভোলার খবর ডেস্ক: আর্যদের বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য জাতি। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘Aryans’। আর্য সমস্যা ইতিহাসের একটি জটিল সমস্যা। আর্যদের পরিচয় এখনো রহস্যাবৃত। আর্য কারা, তাদের আদি বাসস্থান কোথায়, তারা কী ভারতীয় নাকি বহিরাগত, এ বিষয় গুলো নিয়ে একের পর এক বিতর্ক হয়েছে কিন্তু কোন নিশ্চিত সমাধানসূত্র আজও অধরা।
একটি মত অনুসারে আর্য বলতে একটি বিশিষ্ট ভাষা গোষ্ঠীর মানুষকে বুঝায়। অন্য মত অনুযায়ী আর্য কথাটি জাতি অর্থে ব্যবহার করা উচিত। অর্থাৎ আর্য একটি জাতি গোষ্ঠী। বর্তমানে প্রথম মতের সমর্থকের সংখ্যা বেশি হলেও দ্বিতীয় মতটিকে ফেলে দেওয়া যায় না।
আর্যদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল বা আর্যরা ভারতীয় নাকি বহিরাগত — এ প্রশ্নকে কেন্দ্র করে পন্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ আছে।
প্রথমত, ভারতীয় পন্ডিতগন যেমন— গঙ্গানাথ ঝাঁ, ত্রিবেদী, কাল্লা, এ সি দাস, পুসলকার প্রমূখ মনে করেন, আর্যরা ভারতীয়। ভারতেই তাদের আদি বাসস্থান। তবে ভারতের কোন অঞ্চলে আর্যদের বসবাস ছিল তা নিয়েও বিতর্ক আছে।
দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় কতিপয় পন্ডিত যেমন– গাইলস, হার্ট প্রমূখ মনে করেন ইউরোপে ছিল আর্যদের আদি বাসস্থান। এ ক্ষেত্রেও ইউরোপের কোন অঞ্চলে তারা বসবাস করত তা নিয়েও মত পার্থক্য আছে।
তৃতীয় মত অনুসারে মধ্য এশিয়ার স্তেপি অঞ্চলেই আর্যদের আদি নিবাস। এখান থেকেই তাদের একটি শাখা পারস্য হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। বর্তমানে তৃতীয় মতটিই অধিকাংশ পন্ডিত গ্রহনযোগ্য বলে মনে করেন।
মনে করা হয় আর্যরা প্রথমে সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে
(শতদ্রু, বিপাশা,ইরাবতী, চন্দ্রভাগা,বিতস্তা, সিন্ধু ও সরস্বতী এই সাতটি নদীর অববাহিকা অঞ্চলকে সপ্তসিন্ধু অঞ্চল বলা হয়) কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও সিন্ধুসহ উত্তর – পশ্চিম ভারতে বসবাস করত। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এবং যাযাবর বৃত্তি পরিত্যাগ করে কৃষি কাজকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করায় আর্যরা পূর্ব দিকে গঙ্গা-যমুনা বিধৌত অঞ্চলে বন কেটে বসতি স্থাপন করে। এই ভাবে তারা বিহার পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে আর্যরা বিন্ধ্য পর্বত অতিক্রম করে দক্ষিণ ভারতের দিকেও অগ্রসর হয়।
আর্যরা বহিরাগত— এই তত্ত্বের প্রবক্তা ম্যাক্স মুলার। অষ্টাদশ শতকে তিনি ভারতীয়দের উপর গবেষণা করে এবং বেদের ইংরেজি অনুবাদ করে এই তত্ত্ব দাড় করালেন। আর্যদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ। ঋগ্বেদে আর্যদের জীবনী,সমাজ ব্যবস্থা প্রভৃতি সম্পর্কে উল্লেখ আছে। কিন্তু কোথায়ও আর্যরা উল্লেখ করেননি তারা ভারতে বাহির থেকে এসেছেন।ঋগ্বেদে উল্লেখ করেছেন তারা সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে বসবাস করতেন। তাহলে আমরা কি করে বলতে পারি আর্যরা বহিরাগত? যদি তাই হতেন তবে তো তাদের পূর্বের বাসস্থান সম্পর্কে কিছু না কিছু উল্লেখ করতেন। যেমন মুঘল সম্রাট বাবর তার আত্মজীবনী ‘তুজুঘ-ই-বাবর’ গ্রন্থে নিজ আদি বাসস্থান ফারগানা রাজ্যের তরমুজের খুব প্রশংসা করেছেন।

আর্যদের ধর্মীয় জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং বিভিন্ন দেব দেবীর আরাধনা করতেন। যেটা ভারত বর্ষে আজও বিদ্যমান। যদি আর্যরা ইউরোপ বা মধ্য এশিয়া থেকে আসতেন, তাহলে সেখানে আজও সনাতনী বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত থাকত। কিন্তু সেটা দেখা যায় না।

আর্যদের সমাজে জাতিভেদ প্রথা ছিল। যথা- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শুদ্র। যা ভারতবর্ষে হিন্দু সমাজে আজও বিদ্যমান। ইউরোপ বা মধ্যএশিয়ার কোন ধর্মের সমাজ ব্যবস্থায় জাতিভেদ প্রথা নেই। যদি আর্যরা ভারতবর্ষে বাহির থেকে আসতেন তবে তাদের আদি বাসস্থানে জাতিভেদ প্রথার প্রচলন কিছুটা হলেও থাকার কথা। কেননা একটি জাতির আদি বাসস্থানে তার সমাজ ব্যবস্থার কিছু না কিছু রীতি নীতি থেকে যায়।
আর্যদের সভ্যতা, সমাজ ব্যবস্থা,সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস সকল কিছু ভারত ভুমিতে। কেন তারা তাদের আদি বাসস্থানে সভ্যতার সৃষ্টি করল না? আর্যদের ধর্মগ্রন্থ বেদ। বেদের চারটি ভাগ- ঋগ,সাম,যজু,অথর্ব। তাদের ধর্মীয় মহাকাব্য- রামায়ণ ও মহাভারত। সকল গ্রন্থের আলোচ্য বিষয়, উপজীব্য বিষয়, চরিত্র, স্থানের নাম সকল কিছুই ভারতবর্ষের। উল্লিখিত গ্রন্থসমূহ রচনা করলেন ভারতে বসে। এই গ্রন্থগুলোর কোথায়ও উল্লেখ নেই আর্যরা ভারতীয় নয় বা তার ভারতে বহিরাগত। এমনকি তাদের আদি বাসস্থানের কোন ইঙ্গিত করে না।কোন জায়গার নাম বা কোন খাদ্য, প্রানীর নাম। তবে কি আর্যরা এতোই অকৃতজ্ঞ!! ছিল তাদের আদি বাসস্থানের কথা স্মরণই করল না?
আসলে আমরাই আর্যদেরকে বহিরাগত বলছি শুধু মাত্র আর্যকে একটি ভাষা হিসাবে ধরে নিয়ে। অথচ তাদের ধর্মগ্রন্থ বেদ, রামায়ণ, মহাভারত সংস্কৃত ভাষায় রচিত।
কোন প্রামানিক শিলালিপি, প্রস্তর খন্ড, দলিল দস্তাবেজ ছাড়াই একটি জাতিকে বহিরাগত বানিয়ে দেয়া হল!!
এখনো কি বলার সময় হয়নি?
আর্যরা ভারতে বহিরাগত নয়।
বিপ্লব মন্ডল, প্রভাষক, ইতিহাস বিভাগ, বাংলাবাজার ফাতেমা খানম কলেজ।

ফেসবুকে লাইক দিন