আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ সোমবার, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মে, ২০২৪ ইং, ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
সর্বশেষঃ

The History of Birthday-তাকী আহমাদ

ভোলার খবর ডেস্ক: কুয়াশা ঘেরা শীতের সকালে ক্লাসে যেতে মোটেই ভালো লাগে না। এটেন্ডেন্সের জন্য যেতে হয়। এ্যাবসেন্ডের বড়ো ভয়। আজ অবদি একটা ক্লাশও এ্যাবসেন্ড ছিলাম না। ঘুম চোখে ক্লাশে গেলাম। দেরী করে যাওয়ায় বসতে হলো একেবারে পেছনের বেঞ্চ। আয়ান সামনের বেঞ্চে বসা। স্যার হিউম্যান বডি (মানবদেহ) সম্পর্কে লেকচার দিচ্ছেন।
প্রথম ক্লাশ শেষে এক ঘন্টার ব্রেক। তারপর পরের ক্লাশ। সকালের নাস্তার জন্য ক্যান্টিনে যাব। অনেক ক্ষুধা। আয়ানের সাথে লাইব্রেরিতে দেখা। কী যেন পড়ছে।
তোর হাতে এটা কীসের বই.? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
এটা.? বইয়ের দিকে ইশারা করল আয়ান।
হুম, আমি বললাম।
এটা জন্মদিনের ইতিহাস নিয়ে একটি বিখ্যাত বই Adelin Linton- এর লেখা The Lore of Birthday।
বইটি পড়েছিস.? আয়ান বলল।
না, আমি বললাম।
আয়ান অনেক ক্ষুধা লেগেছে, চলনা শ্যাডোতে যাই।
রোজা ভাঙতে যাবি বুঝি,তো কোথায় যাবি.?
রোজা ভাঙতে মানে.? প্রশ্ন করলাম।
Breakfast করতে যাবি না এখন? আয়ানের পাল্টা প্রশ্ন।
হ্যাঁ, বললাম।
Break Fast -এর আক্ষরিক অনুবাদ করলে তো হয় রোজা ভাঙ্গা।হা হা হা।
চল শ্যাডোতে যাই। সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে আয়ান বলল।তোকে আজ একটা মজার গল্প বলবো, শুনবি..?
মনে মনে বললাম, ক্ষুধায় পেট চিনচিন করছে, আসছে গল্প শোনাতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বললাম, জি স্যার বলুন।
আদনান জানোছ! খৃষ্টানরা যেই দিনটিকে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন বলে পালন করে, যাকে আমরা ক্রিসমাস হিসেবে জানি,আগেকার খ্রিস্টানরা যিশুর জন্মদিন পালন করত না। কী বলছিস আয়ান! আদনান-এর প্রশ্ন। আমার জানামতে ক্রিসমাস হলো খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব। আর তুই বলছিস পূর্বের খ্রিস্টানরা ক্রিসমাস পালন করতো না। আয়ানের এমন কথা শুনে ক্ষুধার কথা ভুলেই গেলাম। কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলাম, কারণটা কী..?
শোন! আগেকার খ্রিস্টানরা মনে করত,বার্থডে পালন করা হলো প্যাগানদের প্রথা।
কিন্তু আয়ান! জন্মদিনের প্রসঙ্গ উঠলেই তো আমরা বলি, এটা ইহুদি -খ্রিস্টানদের প্রথা।
না আদনান। এটা একটা ভুল ধারণা, তারা এই প্রথার প্রচলন তো করেইনি;বরং তারা জন্মদিন উদযাপন করাকে ঘৃণা করত। তারা বলতো, ‘পাপিরাই কেবল বার্থডে পালন করে।’তাদের পান্ডুলিপিতে কি জন্মদিনের ব্যাপারে কোনো সমাচার নেই.? জিজ্ঞেস করলাম।
না,আয়ান বলল।ইহুদি ধর্মের বিশ্বকোষ ” Encyclopedia judacia” রিসার্চ করে ইহুদি সংস্কৃতিতে জন্মদিন পালনের রীতি খোঁজে পাওয়া যায়নি।
তাহলে বার্থডে পালন করত কারা..? জিজ্ঞেস করলাম।
জন্মদিন উদযাপন এ তথ্য পাওয়া যায় বাইবেলে। কিন্তু কে সর্বপ্রথম বার্থডে পালন করে, এটা ইতিহাসে অনুপস্থিত। ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী ” ফিরআউন ( তৎকালীন সময়ের বাদশাহদেরকে ফিরআউন বলা হতো) তার একটি বার্থডে পার্টির আয়োজন করেন। রোম, পারস্য, চীনেও বার্থডে পালন করা হতো। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস লিখেন, ” পারস্যের লোকেরা নিজেদের জন্মদিনকে ঘটা করে উদযাপন করেন।
আয়ান আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ল।
কীরে দাঁড়ালি কেন.? জিজ্ঞেস করলাম।
তোর না ক্ষুধা লেগেছে.? আয়ান বলল।
হুম, বললাম।
শ্যাডোতে চলে আসছি তো।
আদনানের এতক্ষণে হুঁশ ফিরে আসল।
কী খাবি.? আয়ান বলল।
স্যান্ডুইচ, আমি বললাম।
মামা( ওয়েটার) প্লিজ টু স্যান্ডুইচ, আয়ান বলল।স্যান্ডউইচ শেষ করে পানি পান করার জন্য বোতল হাতে নিলাম।
এটা পান করিছনা, আয়ান বলল।
কেন.? জিজ্ঞেস করলাম।
এটা ড্রিংকেবল ওয়াটার না! দেখ পানির ভেতর ময়লা ভাসছে। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পানি পান করতেন, আগে তা ভালোভাবে দেখে নিতেন।
স-রি, আর কখনো হবে না, ইন শা আল্লাহ।
শ্যাডো থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম ভার্সিটির পথে।
আয়ান! তখন কী যেন বলছিলি.? প্রশ্ন করলাম।
লাইব্রেরিতে তোকে Adelin Lenton -এর লেখা “The Lore of Birthday ” বইটা দেখিয়েছিলাম।
হ্যাঁ,আমি বললাম।বইটিতে লেখা রয়েছে, জন্মদিন উদযাপনের সাথে জৌতিশাস্ত্রের এক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।
মানে। জিজ্ঞেস করলাম।
পূর্বের গণকরা ভাগ্য গণনা করতেন জন্ম তারিখ অনুযায়ী। ভাগ্য গণনার জন্য জন্ম তারিখ মনে রাখা অপরিহার্য ছিল। তাই তারা যার যার জন্ম নিখুঁত ভাবে মনে রাখতো।
পূর্বের কথা বলছিস কেন..? আমি বললাম।
এখনও তো ম্যাগাজিনে রাশিফল দেয়। সেটাও ডিপেণ্ড করে জন্ম তারিখের ওপর।
ইভেন, ফেইসবুকে একটি ট্রেণ্ড রয়েছে,যাতে জন্ম তারিখ ডিপেন্ড করে বলে দেয়, তুমি কেমন হবে।
হাউ- উইভার, গণকের কাছে যাওয়া নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা তো অবশ্যই জানিস.?
হ্যাঁ, আমি বললাম।
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যাক্তি গণকের কাছে কোনো প্রশ্ন করে, তার চল্লিশ দিনের ইবাদাত কবুল করা হয় না। আর যে গণককে মনে প্রাণে বিশ্বাস করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। তার মানে বলতে চাস,জন্মদিন উদযাপন এটা প্যাগানদের থেকে এসেছে..?
হুম মাই ডিয়ার, এমনকি বার্থডে উদযাপনের পুরো অনুষ্ঠানের সাথে তাদের সংস্কৃতি জড়িত। মোমবাতি জ্বালানো,কেক কাঁটা, গিফট দেওয়া সবগুলোই কি তাদের সংস্কৃতির সাথে জড়িত.? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
হ্যাঁ, সবগুলোই। জন্মদিনের উদ্দেশ্য হলো ইভেল স্পিরিট (অশুভ আত্মা) থেকে আত্মরক্ষা। আগে মনে করা হতো অশুভ আত্মা থেকে আত্মরক্ষার একটি মাধ্যম হলো বার্থডেতে পশু বলি দেওয়া।
ইভেন, শয়তানের ধর্মীয় উৎসবরের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বার্থডে পালন করা।
জন্মদিনে মোমবাতির প্রচলন শুরু করে গ্রিকরা। তারা প্রতি বছরের ছয় মাসের ছয় তারিখে Artemis-এর জন্মদিন উপলক্ষে কেক বানাত,মন্দিরের বেদীতে মোমবাতি জ্বলাত। মোমবাতিকে মনে করা হতো সৌভাগ্যের প্রতীক। অনেক সময় দেখা যায়, যার যততম জন্মদিন ততোটি মোমবাতি জ্বালানো হয়, এক ফুঁতে সব নিবাতে পারলে মনে করা হয়, এটা সৌভাগ্য! অথচ না বুঝে কতো বড়ো কুফরি করা হচ্ছে। আজ বিশ্বের শতকরা পঁচানব্বই ভাগ মানুষ এ অন্ধকারের জগতে ডুবে আছে।
স্রেফ একটি জন্মদিন উদযাপনের পেছনে এতো পৌত্তলিক সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে। শুনে থ হয়ে গেলাম। এ দিকে ব্রেক শেষ হয়ে ঘন্টার সময় হয়ে গেল। কদম রাখলাম শ্রেণীকক্ষে।

ফেসবুকে লাইক দিন