আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
সর্বশেষঃ

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

নিউজ ডেস্ক:
জন্ম ও শিক্ষা:মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালের ১০ই ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের) পাবনা জেলার সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতার নাম খায়রুন্নেসা। মো. সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরে যান৷ ব্যক্তিজীবনে তিনি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামেই বেশি পরিচিত৷ ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক ছেলের বাবা যার নাম মো. আরশাদ আদনান (রনি)। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্ম সচিব ছিলেন৷ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
রাজনৈতিক জীবন: সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর তিঁনি কারাবরণ করেন।
তিঁনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিঁনি দায়িত্ব পালন করেন৷ পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে খালি থাকা প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়। তিঁনি ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
কর্মজীবন: পেশায় তিঁনি একজন আইনজীবী ছিলেন। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ১৯৮০ থেকে দুই বছর দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন। পরে আইন পেশায় যোগ দেন। শুরুতে তিঁনি পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। কর্মের ধারাবাহিকতায় তিনি যথাক্রমে যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন৷
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়, যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে৷ পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে ‘কমিশন’ গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন মো সাহাবুদ্দিন৷
জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এই মহাসচিব বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত করা সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷
তিঁনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন৷ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন৷
মো. সাহাবুদ্দিন জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি হিসাবে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন৷ এ ব্যাংকের অডিট কমিটির সদস্য৷ তিঁনি। বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক অ্যাডভাইজারের পাশাপাশি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন৷
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদে পরোক্ষ ভোটে৷ সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনে ভোট দেন৷ তবে মো. সাহাবুদ্দিন একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় ভোটাভুটির প্রয়োজন আর পড়ল না৷ সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একবারই সংসদের কক্ষে ভোট করতে হয়েছিল৷ পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন৷
বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারেন৷ বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার দ্বিতীয় মেয়াদ সমাপ্ত করায় সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়াারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সোমবার বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বেলা ১১টার দিকে বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শপথ বাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী
স্বাধীনতার পর থেকে ২১ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৭ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন:
০১। শেখ মুজিবুর রহমান-১৭ এপ্রিল ১৯৭১-১২- জানুয়ারি ১৯৭২-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
০২। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৭ এপ্রিল ১৯৭১-১২ জানুয়ারি ১৯৭২-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
০৩। আবু সাঈদ চৌধুরী১২ জানুয়ারি ১৯৭২-২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
০৪। মোহাম্মদউল্লাহ-২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩-২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
০৫। শেখ মুজিবুর রহমান-২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫-১৫ আগস্ট ১৯৭৫-বাকশাল
০৬। খন্দকার মোশতাক আহমেদ-১৫ আগস্ট ১৯৭৫-৬ নভেম্বর ১৯৭৫-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
০৭। আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম-৬ নভেম্বর ১৯৭৫-২১ এপ্রিল ১৯৭৭–বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
০৮। জিয়াউর রহমান-২১ এপ্রিল ১৯৭৭-৩০ মে ১৯৮১-সামরিক/বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
০৯। আবদুস সাত্তার-৩০ মে ১৯৮১-২০ নভেম্বর ১৯৮১-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
১০। আ ফ ম আহসানউদ্দিন চৌধুরী-২৭ মার্চ ১৯৮২-১০ ডিসেম্বর ১৯৮৩-নির্দলীয়
১১। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ-১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩-৬ ডিসেম্বর ১৯৯০-সামরিক/জাতীয় পার্টি
১২। শাহাবুদ্দিন আহমেদ-৬ ডিসেম্বর ১৯৯০-১০ অক্টোবর ১৯৯১-নির্দলীয়
১৩। আবদুর রহমান বিশ্বাস-১০ অক্টোবর ১৯৯১-৯ অক্টোবর ১৯৯৬-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
১৪। শাহাবুদ্দিন আহমেদ-৯ অক্টোবর ১৯৯৬-১৪ নভেম্বর ২০০১-নির্দলীয়
১৫। একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী-১৪ নভেম্বর ২০০১-২১ জুন ২০০২-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
১৬। জমির উদ্দিন সরকার-২১ জুন ২০০২-৬ সেপ্টেম্বর ২০০২-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
১৭। ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ-৬ই সেপ্টেম্বর ২০০২-১২ই ফেব্রুয়ারী ২০০৯-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
১৮। জিল্লুর রহমান-১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-২০ মার্চ ২০১৩-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
১৯। আব্দুল হামিদ-১৪ মার্চ ২০১৩-২৪ এপ্রিল ২০২৩-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২০। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন-২৪ এপ্রিল ২০২৩-চলমান-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

ফেসবুকে লাইক দিন