আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে চান? - বিস্তারিত
ঢাকা আজঃ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং, ১৮ই রমযান, ১৪৪৫ হিজরী
সর্বশেষঃ

দুর্নীতিতে কয়েক দফায় এগিয়ে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক!!

বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলার প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত জেলার ঐতিহ্যবাহী ভোলা সরকারি বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি শতাধিক বছর ধরে অভিজ্ঞ শিক্ষকম-লী দ্বারা সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ জেলার মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। ইতিপূর্বে কয়েকটি অনিয়মের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশ হয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক সহ সচেতন মহল। এসব দূর্নীতির প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক হেনস্থা হতে হয় শিক্ষকদের।

সরেজমিনে জানা যায়, ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোনো মিলাদ মাহফিল ও অন্যান্য অনুষ্টান না করেই ব্যাংক থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।সর্বশেষ ২০২২ সালে দোয়া মাহফিলের নামে এপ্রিল ও আগস্ট মাসে রুপালী ব্যাংক ভোলা শাখা থেকে ৬টি চেকের মাধ্যমে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৪২ টাকা তুলে নেয়। টাকা উত্তোলনের খবর শিক্ষক মহলে জানাজানি হলে তড়িঘরি করে ১০ নভেম্বর মিলাদের আয়োজন করা হয়। এনিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজমান।
এদিকে করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ে সব ধরনের অনুষ্টান বন্ধ থাকা সত্বেও কোনো অনুষ্ঠান না করে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন রাড়ী বিদ্যালয়ে অনুষ্টানের নামে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী ও ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক থেকে ৮টি চেকের মাধ্যমে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫শ ২৬ টাকা উত্তোলন করেছেন।বিগত তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ে কোনো খেলাধুলা অনুষ্ঠিত না হলেও তিনি দিবা/প্রভাতী সেশনের ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে খেলাধুলার নামে ৮টি চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৫শ ৮১ টাকা উত্তোলন করেন। অপরদিকে, বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত বেসরকারি খাত সমূহের প্রতিমাসে টিফিন, ক¤িপউটার, নৈশ প্রহরী এবং বিবিধ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হলেও টিফিনের মান অত্যন্ত নাজুক এবং মানসম্মত নয়। দুর-দুরান্ত থেকে আনা নিন্মমানের অস্বাস্থ্যকর টিফিনে শুধু ভাউচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ক¤িপউটারে মাল্টিমিডিয়ায় আদৌ কোনো ক্লাশ হয়েছে কি না তা কোনো শিক্ষার্থী বলতে পারেনা। অপরদিকে, এসব দূর্নীতির টাকার হদিস কেউ না পেলেও খোদ প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন রাড়ীর পকেটস্থ হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে।
তড়িঘরি করে আয়োজন করা ১০ নভেম্বরে অনুষ্টিত দোয়া মাহফিল অনুষ্টানে শিক্ষক আবু তালেব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিনোদনমুলক অনুষ্ঠান না হওয়ায় ছাত্ররা মাদকাসক্তির মত ভয়ানক অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। অনুষ্ঠানে শিক্ষক আলহাজ্ব আহসান কবির বিদ্যালয়ে দূর্নীতির বিষয় উল্লেখ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকেই নানা অনিয়মের চিত্র ফুটে উঠছে। তার কর্মকান্ডে স্কুলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। তিনি স্কুলের শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে কোন প্রকার মিটিং না করে আলাপ আলোচনা ছাড়াই একচছত্র আধিপত্য বিস্তার করে স¤পূর্ণ মনগড়া ভাবে কাজ করেন। তার দূর্নীতি অনিয়মের প্রতিবাদ করলে উনি ক্ষেপে গিয়ে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। ফলে হেনস্থার শিকার হতে হয় সকলকে। আমি ২০২০ সাল থেকে তার সকল কর্মকা-ের তদন্ত দাবী করছি।
ভোলা রেবা রহমান কলেজের প্রভাষক ও অভিভাবক মোঃ জিয়া উদ্দিন বলেন, স্কুল চলাকালীন সময়ে বহিরাগত কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্কুলের ভিতরে টেকচার বসিয়ে ব্যবসা করার কারনে একদিকে যেমন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে এদের সাথে মিশে শিক্ষার্থীরা নানা অপকর্ম শিখছে। স্কুলে নিয়মিত খেলাধূলা ও বিনোদনমুলক অনুষ্টান না হওয়ায় দিনে দিনে শিক্ষার্থীরা কিশোর গ্যাং এবং মাদকাসক্তির মত ভয়ানক অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের নামে ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হলেও কোনো অনুষ্টান হয় না। আগে কমনরুমে খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল। এখন কমনরুমে আর খেলাধুলা হয় না। স্কুলের ওয়াশরুম একেবারেই অরক্ষিত। এখানে উপর ক্লাশের ছত্ররা ঢুকলে নীচের ক্লাশের ছাত্ররা যেতে চায় না। ফলে প্রকৃতির ডাকে অনেক ছাত্রকেই ক্লাশ বাদ দিয়ে বাড়ি চলে যেতে হয়। আমি এসব অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি। এ সব অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন রাড়ী বলেন, আমি প্রধান শিক্ষক হিসাবে সব করতে পারি। টাকা উত্তোলনের কথা অস্বীকার করে প্রথমে বলেন, কোনো টাকা উত্তোলন করি নাই। পরে বলেন, উন্নয়নের কাজে সব টাকা খরচ করেছি। নিন্মমানের টিফিনের বিষয়ে বলেন, জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে। আমি কিছু করি না। স্কুলে টিফিন কমিটি আছে তারাই সব করেন। তবে আমরা বৃহ¯পতিবারও টিফিন দিয়ে থাকি। কমনরুমে খেলাধূলার বিষয়ে বলেন, ২ শিপ্টের স্কুল হওয়ায় ছাত্ররা সময় পায় না। স্কুলে টেকচার বসাতে নিষেধ করেছি কিন্ত তারা শুনতে চায় না। অনেকবার স্কুলের ওয়াশরুম ঠিক করেছি কিন্ত ছাত্ররা সব ভেঙ্গে ফেলে

ফেসবুকে লাইক দিন