ভোলার চরফ্যাসনে বিশ জেলের এখনো মেলেনি খোঁজ
![](https://www.bholarkhobor.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
ভোলার খবর ডেস্ক :
ভোলার চরফ্যাসনের ঢালচর থেকে ৩১ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চট্টগ্রামের এস আর এল এন -৫ নামের একটি ট্রলিং জাহাজের ধাক্কায় উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের কালাম খন্দকারের মালিকানাধীন “মা-সামসুন্নাহার” নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনায় তিনদিন চরফ্যাসনের বিশ জেলের খোঁজ মেলেনি এখনও,পরিবারে শোকের মাতম হলেও এখনোও খোঁজ মেলেনি ২০ জেলের। ১২ ঘন্টা তক্তায় ভেসেছিলেন হাফিজ নামে এক জেলে। পরে সোমবার বেলা ১১ টায় ট্রলার মালিকের ভাই হাফিজকে উদ্ধার করেছে স্থানীয় জেলেরা। পরে তাকে পটুয়াখালী জেলার মহিপুর এলাকায় নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপর্জন ব্যক্তিকে না পেয়ে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন নিখোঁজ হওয়া জেলেদের পরিবার। মঙ্গলবার খোঁজ-খবর নিতে ট্রলার মালিক কামালের বাড়িতে গেলে নিখোঁজ দুই পরিবারের লোকজনদের সাথে দেখা মিলে। সরকারের কাছে তাদের দাবী, নিখোঁজদের সন্ধান করে জীবিত হোক বা মৃত হোক উদ্ধার করে তাদেরকে যেন নিখোঁজদের মুখটা একবার হলেও দেখার সুযোগ করে দেয়। এদিকে প্রশাসনের উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। উদ্ধার তৎপরতায় কোস্টগার্ড এখন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখলেও ট্রলার মালিক কিংবা জেলে পল্লীর লোকজন কোনো সন্ধান অভিযান পরিচালনা করেননি। বুধবার দুপুরে চরফ্যাসন উপজেলার আবদুল্লাহপুর,রসুলপুর, চরমানিকা ইউনিয়নের তিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এক করুন দৃশ্য। নিখোঁজ ফারুক হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, মা-বোনদের কান্নার আহাজারী। একই অবস্থা দক্ষিণ আইচার বাচ্চু মাঝির পরিবারের। এ যেন তাদের কান্নায় আকাশ ভাড়ী হয়ে যাচ্ছে। ফারুক হাওলাদারের ও বাচ্চু মাঝির স্ত্রী ফরিদা বিবি এবং সেতারা বেগম বিলাপ করতে করতে বারবার মুর্চা যাচ্ছেন। চেতনা ফিরে পাওয়ার পর আবার শুরু করেন গগণ বিদারী আর্তনাদ। মায়ের পাশে বসে বিলাপ করতে থাকে বাচ্চুর ছেলে লিটন, ফারুকের শিশু কন্যা শাকিরা (১০) ও শাবনুর (৮)। মাকে সান্তানা দেয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় বড় মেয়ে সায়েরাকে। ভাই নিখোঁজের খবরে চেতনা হারিয়ে ওই বাড়ির উঠানে পড়ে থাকতে দেখা যায় ফারুকের বৃদ্ধা বোন বকুল বেগমকে। তাকে সেবা করে সুস্থ করার কাজে ব্যস্ত বাড়ির অন্য স্বজনরা। অপরদিকে রোববার ট্রলার ডুবিতে অন্যদের সাথে তিনিও নিখোঁজ আছেন একই গ্রামের মো. জাবেদ। ট্রলার ডুবির কয়েক ঘন্টা আগে স্ত্রীর সাথে শেষ কথা বলেন জাবেদ। হাতের মেহেদী শুকানের আগেই স্বামী হারানোর আশঙ্কায় নির্বাক তরুনী রাশিদা ঘরের দরজায় বসে বসে স্বামীর অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। টানা ২দিন কানতে কানতে এখন কথা বলতে পারেন না তিনি। জাবেদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় পুত্রবধু রাশিদা নিয়ে জাবেদের বৃদ্ধা মা ফাতেমা বেগম বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছেন। বৃদ্ধার ফাতেমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলে জাবেদকে হারানোর আশঙ্কা তিনিও দিশেহারা। অনিশ্চত ভবিষ্যতের অপেক্ষায় নতুন পুত্রবধুকে নিয়ে করা বিলাপ থামছে না ফাতেমা বেগমের। নিখোঁজ ২০ জনের মধ্যে ৭ জনের বাড়িই আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নে। ফারুক হাওলাদার আর জাবেদের পরিবারের মতোই জসিম, খালেক, ইউসুফ, রফিক, মাকসুদের বাড়িতেই বিলাপ আর্তনাদ। নিখোঁজদের মধ্যে রসুলপুর ইউনিয়নের ৫ জন। তারা হলো শাহিন, দিন মোহাম্মদ, সুমন, নাগর মাঝি, মিজান। দক্ষিণ আইচা থানার মানিকা ইউনিয়নে নিখোঁজ রয়েছে বাচ্চু মাঝি, নুরে আলম, আলামিন মাঝি, হারুন মুন্সী, নুরুল ইসলম। নীলকলম ইউনিয়নে ট্রলার মাঝি বাচ্চু ও আবুল বাশার ও দৌলতখানের ১ জন।
সরেজমিনে ক্ষুদ্ধ স্বজনরা অভিযোগ করেন, দুর্ঘটনার পর পর বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও উদ্ধার তৎপরতায় সঠিকভাবে হয়নি। এমন দুর্ঘটার সাথে সাথে উদ্ধার কাজ শুরু করা না হলে কাউকেই জীবিত পাওয়ার সম্ভবনা থাকে না। কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের কমান্ডার হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, ঘটনার পর পরই কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাসন থেকে ২টি টিম ও চট্টগ্রাম থেকে একটি জাহাজ অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযান এখনও অব্যাহত আছে।
চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান রাহুল বলেন, কোস্টগার্ডের একাধিক টিম উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।