খালেদা জিয়ার অবস্থার নেই উন্নতি, বিএনপি’র অনশন আজ
অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই। করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতো রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি মানবজমিনকে বলেন, খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র-আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন হলেও নেয়া হচ্ছে না। কারণ আইসিইউ’র সব সাপোর্ট সিসিইউতে সংযক্ত করা হয়েছে। তবে সব সময় আইসিইউ’র সাপোর্টের প্রয়োজন হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে আইসিইউ’র সাপোর্ট লাগছে। তাই সবকিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অক্সিজেন লাগছে এটা বড় কোনো সমস্যা নয়। এটি ছাড়াও মেজর সমস্যা রয়েছে।তবে প্রতিদিনই ২-৩ লিটার অক্সিজেন লাগছে। প্রতিদিন প্রধান ইলেকট্রোলাইট অর্থাৎ সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরিন উপাদানের পরিমাণ কমছে। রক্তের হিমোগ্লোবিন কোনোভাবেই বাড়ানো যাচ্ছে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যের অন্য প্যারামিটারগুলোর অবস্থা অবনতির দিকে। কিডনির ক্রিয়েটিনিন হু হু করে বাড়ছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও ডায়াবেটিস একেবারে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। তাই ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। শরীরে প্রচণ্ড দুর্বলতা আছে।
জানা গেছে, মেডিকেল বোর্ড হাসপাতালের বাইরের কাউকে এলাউ করছে না। ঝুঁকি থাকায় খালেদা জিয়ার কাছে যেতে নিষেধাজ্ঞা আছে। শুধু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস প্রতিদিন হাসপাতালে যাচ্ছেন। তবে তারাও সিসিইউ’র বাইরের গ্লাস দিয়ে শুধু সালাম বিনিময় করেন। খালেদা জিয়াও ইশারায় জবাব দেন। ডিউটি ডাক্তাররাই শুধু রাউন্ডের সময় সিসিইউতে যাচ্ছেন। প্রয়োজন মাফিক তরল জাতীয় খাবার বাসা থেকে রান্না করে হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সার্বক্ষণিক আছেন পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথি ও গৃহপরিচারিকা ফাতেমা ও স্টাফ ফারজানা রুপা।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার দাবিতে আজ সারা দেশের জেলা ও মহানগরে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে সকল রাজনৈতিক দলকে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আগামীকাল বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে গণঅনশনের ডাক দিয়েছি। আমরা আশা করবো সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাদের এই গণঅনশন কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করবেন। আমরা আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি দয়া করে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসবেন। গণঅনশন কর্মসূচির জন্য আমরা অনেক জায়গায়ই চেয়েছি কিন্তু আমাদের কোথাও জায়গা দেয়া হয়নি। আর আমাদের এই কর্মসূচি থেকেই পরবর্তী প্রোগ্রাম আমরা ঘোষণা করবো। তিনি বলেন, আপনারা জানেন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল আইনমন্ত্রী বলেছেন, এতে আইনের কোনো সুযোগ নেই তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। সরকার চাইলে তাকে মুক্তি দিতে পারেন, সরকার চাইলে তাকে বিদেশে পাঠাতে পারেন। কিন্তু তাদের লক্ষ্য একটাই- বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ রাজনীতি থেকে সরিয়ে এবং এ দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যই তারা তাকে বিদেশ যেতে দিতে চাচ্ছে না। খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমরা জানি না কতোটা গুরুতর অসুস্থ বেগম জিয়া। আমরা ডাক্তারদের ভাষা বুঝি না। সাধারণ মানুষ হিসেবে যেটা বুঝি তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমি জানি না পার্লামেন্টে যখন প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন, কোন রাজনৈতিক ভাষায় তিনি কথা বলেন। কোন শিষ্টাচারের মধ্যে কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়া ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। তিনি এ দেশে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। একমাত্র অহঙ্কার, প্রতিশোধ এবং দাম্ভিকতার কারণেই বেগম খালেদা জিয়াকে আজকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি একটু কথা বলতে চাই- দেশকে বাঁচাতে হলে, আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের জনগণকে রক্ষা করতে হলে, গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনতে হলে ওই যে বাতিঘর, যে বাতিঘরের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি, সেই বেগম খালেদা জিয়াকে সুস্থ করতে হবে, তাকে মুক্ত করতে হবে। তার সঙ্গেই আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন জড়িত আছে। কারণ গণতন্ত্র এবং বেগম খালেদা জিয়াকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন আমরা এই ভয়াবহ দানব সরকারকে সরানোর জন্য সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা এবং গণঅভ্যুত্থান ছাড়া এই দানবীয় সরকারকে হটানো সম্ভব নয়। অনেক দলীয় নেতারা বলেছেন যুগপৎ, এক মঞ্চ এসব বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা যার যার জায়গা থেকে আন্দোলন শুরু করি।
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদ উজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপা একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, এলডিপির একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।