ভোলায় প্রকাশ্যে চলছে জাটকা ধরা ও বিক্রি
ভোলায় দীর্ঘ ৮ মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে চলছে জাটকা শিকারের মহোৎসব। এছাড়াও ভোলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে ওইসব জাটকা ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশসহ প্রশাসনের কঠোর অভিযান চললেও বন্ধ হচ্ছে না জাটকা শিকার ও ক্রয়-বিক্রয়। জেলেদের দাবি পেটের দায়ে তারা বাধ্য হচ্ছেন জাটকা শিকারে।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি মেঘনা নদী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘড়ির কাটায় দেড়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকশ জেলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল নিয়ে নৌকা ও ট্রলারে করে জাটকা শিকারে নদীতে নেমে পড়েছেন। আবার ঘড়ির কাটায় ৩টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ওইসব জেলেরা জাটকা শিকার করে তীরে ফিরতে শুরু করেছেন। জেলেদের শিকার করা মাছের মধ্যে বেশিরভাগই ছোট সাইজের জাটকা। ওইসব জাটকা মৎস্য ঘাটে এনে ৫-৬ ইঞ্চি সাইজের জাটকা হালি প্রতি ৫০-৬০ টাকা ও ৮-৯ ইঞ্চি সাইজের জাটকা ১২০-১৫০ হালি বিক্রি করছেন জেলেরা। আর ভোলার বিভিন্ন বাজারে আবার ওই সব জাটকা প্রকাশ্যে বিক্রি হয় ১২০-১৩০ টাকা ও ২০০-২৫০ টাকা হালি দরে।
ওই এলাকার মেঘনা নদীর জেলে মো. কাওছার মাঝি ও আবু তাহের মাঝি বলেন, ‘আমরা নদীতে যাই প্রতিদিন। নদীতে যাইয়া জাটকা মাছ শিকার করি। নদীতে বর্তমানে জাটকা মাছের পরিমাণ বেশি।’
জেলে মো. নুরুল ইসলাম মাঝি ও জামাল মাঝি বলেন, ‘জাটকা ধরা অপরাধ আমরা জানি। কিন্তু কী করমু? বিভিন্ন এনজিওর ঋণ নিছি, সংসার চালাইতে হয়। তাই বাধ্য হইয়া জাটকা ধইরা ঋণ পরিশোধ করি ও সংসার চালাই।’
তারা আরো জানান, আমরা জেলেরা অসহায় ও গরিব মানুষ। প্রতিদিন নদীতে যাই বড় ইলিশ ধরার জন্য কিন্তু বড় মাছ না থাকায় জাটকা ধরি।
তুলাতুলি মৎস্য ঘাটের ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন ব্যাপারী জানান, নদীতে বর্তমানে বড় সাইজের ইলিশ খুবই কম ধরা পড়ে। কিন্তু অনেক অসাধু জেলেরা নদীতে গিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা শিকার করে। ওই জাটকা আমরা ক্রয়-বিক্রয় করি না। কারণ আমরা সরকারি আইন মেনে মাছ কিনি। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা জেলেদের থেকে কম মূল্যে জাটকা কিনে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে। আমরা চাই সরকার জাটকা শিকারের ওপর কঠোর অভিযান পরিচালনা করুক।
ভোলা সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন জানান, বর্তমানে নদীতে ছোট ও বড় সব সাইজের ইলিশের পরিমাণ বেশি রয়েছে। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ জাটকা শিকার ও বিক্রি করলে আমরা অভিযান পরিচালা করে তাদের আটক করছি। কিন্তু কিছু কিছু অসাধু জেলে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জাটকা শিকার করছেন। তাদেরকেও আমরা অভিযান চালিয়ে আটক করছি।
তিনি আরো জানান, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় মৎস্য বিভাগ কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও পুলিশ সদস্যসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।উল্লেখ্য, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের নিচে জাটকা ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।